করোনায় আক্রান্তের হার কিছুটা কমলেও সংক্রমণের আশঙ্কা কমেনি। ভাইরাসের নতুন নতুন ধরন এখনো পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যেকোনো সময় বাংলাদেশে সেসবের সংক্রমণ হতে পারে। করোনায় যে শুধু জীবনহানি হয়েছে তা-ই নয়, অর্থনীতিতেও পড়েছে এর বিপুল নেতিবাচক প্রভাব। শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশের গতি শ্লথ হয়েছে।
বিনিয়োগ কমে গেছে। বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে জমা হয়ে আছে বিপুল অর্থ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে কোনো ধরনের বিনিয়োগে নেই এমন অর্থের পরিমাণ (অলস টাকা) প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি সব খাতের ব্যাংকেই এমন অলস টাকা পড়ে আছে।
করোনার কারণে মানুষের আয়-উপার্জন কমেছে। কমে গেছে অনেক পণ্য ও সেবার চাহিদা। ফলে নতুন বিনিয়োগ যেমন হচ্ছে না, তেমনি বিভিন্ন শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতারও পুরোপুরি ব্যবহার হচ্ছে না। অন্যদিকে মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী আমদানি কমে গেছে। এসব কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে গেছে। এটি অর্থনীতির সুস্থ বা স্বাভাবিক গতি নয়। অথচ করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগে বিভিন্ন খাতে উৎপাদন ও নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ যেমন বাড়ছিল, তেমনি বেড়ে যাচ্ছিল রপ্তানির পরিমাণ। বাড়ছিল মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ।
একই সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছিল বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণের প্রবাহ। এখন ব্যাংকিং খাতে প্রতিনিয়ত যেভাবে অলস অর্থের পরিমাণ বেড়েই চলেছে, তাতে অনেক ব্যাংকই লোকসানে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু প্রণোদনা দেওয়া নয়, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে করোনার মহামারিজনিত এমন বিরূপ পরিস্থিতিতেও কিছু কিছু শিল্প খাত যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখিয়েছে। যেমন—হালকা প্রকৌশল শিল্পে ২০২০-২১ অর্থবছরের গত সাত মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬০ শতাংশ। কর্মসংস্থানের বড় উৎস ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অনেক ক্ষেত্রই ব্যাপক সম্ভাবনা দেখিয়েছে। পাশাপাশি যে খাতগুলো করোনার কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং পুনরুদ্ধারে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
গত এক দশকে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল, সারা বিশ্বেই তা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্ব বাংলাদেশকে চিনেছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে আমাদের উত্তরণ ঘটেছে। ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। এই অবস্থায় অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি ধরে রাখা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আলোকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।