অভাব-অনটন বেশি থাকা এবং আয়-উপার্জনের সুযোগ কম থাকায় প্রতিবছর বহু বাংলাদেশি বিদেশে পাড়ি জমান। সাম্প্রতিক সময়ে পুরুষদের পাশাপাশি বিদেশগামী নারী কর্মীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে প্রবাসে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখের বেশি। তাঁদের ১২ শতাংশ বা প্রায় ১০ লাখই হচ্ছেন নারী।
তাঁরা যান মূলত মধ্যপ্রাচ্যে এবং গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে। সেখানে নারী কর্মীরা প্রায়ই নানা সমস্যায় পড়ছেন। শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ঠিকমতো বেতনও দেওয়া হয় না। অনেককে খালি হাতেই ফিরে আসতে হয়। তার পরও নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার হার ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু গৃহকর্মী হিসেবে না পাঠিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের দক্ষ করে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এই রিজার্ভ বৃদ্ধিতে একটি বড় ভূমিকা রেখেছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ কর্মীদের তুলনায় নারী কর্মীরা তাঁদের আয়ের বেশির ভাগই দেশে পাঠিয়ে দেন। পুরুষ কর্মীরা যেখানে তাঁদের আয়ের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ দেশে পাঠান, সেখানে নারীরা পাঠান প্রায় শতভাগ। তার পরও নারী কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এত উদাসীনতা কেন? ২০১৯ সালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনে নারীদের নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।
সে বছর সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা ১১০ নারী গৃহকর্মীর সঙ্গে কথা বলে কমিটি যে প্রতিবেদন দেয় তাতে বলা হয়, ৩৫ শতাংশ নারী শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন এবং ৪৪ শতাংশ নারীকে নিয়মিত বেতন দেওয়া হতো না। সে অবস্থার পরিবর্তনে যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি? সম্ভবত না। আর সে কারণেই নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসা নারী কর্মীর সংখ্যা শুধু বাড়ছে। বাড়ছে লাশ হয়ে ফিরে আসার সংখ্যাও। ২০২০ সালে করোনা মহামারির মধ্যে বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন মোট চার লাখ ২৫ হাজার ৬৯৭ জন কর্মী। এর মধ্যে ৫০ হাজার ৬১৯ জন নারী। আর তাঁদের ২২ হাজারই সৌদিফেরত। তাঁদেরও বেশির ভাগই নানা ধরনের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেছে বলে জানিয়েছে ব্র্যাক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশে নারী কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে দালালদের প্রতারণা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নারীদের বিদেশে পাঠায়। যথাযথ প্রক্রিয়ায় যাঁরা যান, তাঁদের ক্ষেত্রেও কিছু নীতিমালা অবলম্বন করতে হবে। গৃহকর্মী হিসেবে না পাঠিয়ে কেয়ার গিভার, গার্মেন্টকর্মী বা অন্যান্য পেশায় পাঠাতে হবে। এ জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে থাকাকালে প্রত্যেকের সঙ্গে মোবাইল ফোন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। দেশগুলোতে থাকা বাংলাদেশ মিশনকে এ ব্যাপারে আরো সক্রিয় হতে হবে।