অভিযোগটা এত দিন শুধু দেশের ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই ছিল। বলা হতো দেশের অনেক ব্যবসায়ী বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয় না বা ভ্যাট ফাঁকি দেয়। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, বিদেশি প্রতিষ্ঠানও ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে কম যায় না। দীর্ঘ চেষ্টার পর বিশ্বজুড়ে সমাদৃত সার্চ ইঞ্জিন গুগল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনকে বাংলাদেশে ভ্যাটের আওতায় আনা হয়েছে। বাংলাদেশে করা ব্যবসা থেকে প্রতিষ্ঠান তিনটি গত দুই মাসে সরকারকে ভ্যাট দিয়েছে মাত্র ১০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সন্দেহ করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো নামমাত্র আয় দেখিয়ে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টদের অভিমত, এসব প্রতিষ্ঠান তারা বাংলাদেশে যে আয়ের তথ্য দিচ্ছে তা বাস্তবসম্মত নয়। আরো একটি বিষয় এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটের মতো অনাবাসী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও সরকারকে কোনো ভ্যাট দিচ্ছিল না। এতে কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। আবার ইন্টারনেটভিত্তিক এসব বিদেশি প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপন প্রচারের আড়ালে দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হওয়ার অভিযোগও আছে। সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
গত বছরের শুরু থেকে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে অনলাইনের ব্যবহার বেড়েছে। এ সময় অনলাইনের দিকে ঝুঁকে পড়ে বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। গত দুই বছরে ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে বেড়েছে। প্রকাশিত একটি খবরে বলা হচ্ছে, গত সাত বছরে শুধু মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোই বিদেশে পাঠিয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কয়েক হাজার বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিদিন বিদেশে টাকা পাঠাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটের মতো অনাবাসী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও সরকারকে কোনো ভ্যাট দিচ্ছিল না। গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন ও মাইক্রোসফট বাংলাদেশ থেকে ভ্যাট নিবন্ধন নেয়। এখন তারা নিজেরাই আয় করে অ্যাসেসমেন্ট করে নিজেরাই ভ্যাট পরিশোধ করছে। বছর শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট রিটার্ন অডিট এবং তাদের বাংলাদেশ থেকে আয় ও ব্যয়ের সব তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করলে বলা যাবে কম্পানিগুলো সঠিক হারে ভ্যাট দিচ্ছে নাকি ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে।
তথ্য গোপন করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বন্ধে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।