বেঁচে থাকতে হলে নিঃশ্বাস নিতেই হবে। কিন্তু ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা এত বেশি যে নিঃশ্বাস নিলেই অসুস্থ হতে হয়। তাহলে ঢাকায় বসবাসকারী মানুষ কি নিঃশ্বাস না নিয়ে থাকতে পারবে? শুধু ঢাকা নয়, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ প্রায় সব বড় শহরে বায়ুদূষণের চিত্র একই। এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয় শুধু দূষিত বায়ুর কারণে। কয়েক বছর আগে ঢাকা শিশু হাসপাতালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ফুসফুসের অসুস্থতা দ্রুত বাড়ছে।
ফুসফুসের সক্রিয়তা বা পিএফটি (পালমোনারি ফাংশন টেস্ট) পরীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকার ২৩.৪৭ শতাংশ মানুষ ফুসফুসের কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। বিশ্বব্যাংকের ২০১৯ সালের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী পরিবেশদূষণের কারণে মৃত্যু দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। এখানে নানা কারণে যত মানুষ মারা যায়, তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশদূষণের কারণে। এর পরে রয়েছে ভারত (২৬.৫)। গত সোমবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী সরকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিতে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরে অর্থাৎ আগামী জুন মাসের মধ্যেই ‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ট্রান্সফরমেশন’ বা বেস্ট প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে। খবরটি আমাদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক।
ঢাকায় বায়ুদূষণের কারণগুলোর মধ্যে ইটভাটার স্থান সবার ওপরে (৫৮ শতাংশ)। প্রতিটি বড় শহরেরই আশপাশে রয়েছে অসংখ্য ইটভাটা। গাজীপুরসহ কয়েকটি সিটি করপোরেশনের সীমানার ভেতরেই স্থাপিত হয়েছে অনেক ইটভাটা। আইনে বলা আছে, জনবসতির তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। বাস্তবে দেখা যায়, জনবসতির আধাকিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে বেশির ভাগ ইটভাটা। এ ছাড়া আছে কলকারখানা ও যানবাহনের কালো ধোঁয়া।
আর রাস্তায় এমন সব যানবাহন চলাচল করে, যেগুলোর দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। আছে অপরিকল্পিত নির্মাণযজ্ঞ। খোলা ট্রাকে বালু পরিবহন নিষিদ্ধ হলেও প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক বালু ঢুকছে শহরে সম্পূর্ণ খোলা অবস্থায়। যথেচ্ছা খোঁড়াখুঁড়ি, যত্রতত্র ময়লার স্তূপও বায়ুদূষণের বড় কারণ। দূষিত বায়ুতে অত্যধিক মাত্রায় ক্ষতিকর বস্তুকণা (পার্টিকুলেটেড ম্যাটার বা পিএম) ভেসে বেড়ায়। নিঃশ্বাসের সঙ্গে এগুলো শরীরে ঢুকে যায়। তারপর বস্তুকণার ধরন অনুযায়ী শরীরে রোগব্যাধি বাসা বাঁধে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বাতাসে ক্ষতিকর বস্তুকণার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ঋতুভেদে সেটি আরো বেড়ে যায়।
২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে, সর্বোপরি মানুষকে বাঁচাতে হলে আমাদের অবশ্যই পরিবেশ উন্নয়নে আরো মনোযোগী হতে হবে। সেই লক্ষ্যে বেস্ট প্রকল্প ছাড়াও আরো প্রকল্প নিতে হবে। পরিবেশদূষণকারী ইটভাটা, কলকারখানা, অধিক পুরনো যানবাহনসহ ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন