বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন এবং এর বাসিন্দা বেঙ্গল টাইগার নিয়ে আমাদের গর্বের অন্ত নেই। কিন্তু সেই গর্বের স্থানটির কী অবস্থা তার কতটুকু খবর আমরা রাখি? প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে এর প্রকৃতি। চোরেরা সাবাড় করে দিচ্ছে এর গাছপালা। আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বনের অংশবিশেষ। বাড়ানো হচ্ছে বসতি ও চাষাবাদ। বিষ দিয়ে, ফাঁদ পেতে শিকার করা হচ্ছে বাঘ, হরিণসহ বিভিন্ন প্রাণী। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, র্যাব সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ধলগ্রাম থেকে একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করেছে। পাশাপাশি দুজন চোরাশিকারিকে আটক করা হয়েছে। তাঁরা স্বীকার করেছেন, ছাগলের মাংসে বিষ মিশিয়ে তাঁরা বাঘটিকে মেরেছিলেন। এই চোরাশিকারিদের আটকানো না গেলে আমাদের গর্বের ধন বেঙ্গল টাইগার টিকে থাকতে পারবে কি?
একসময় সারা দেশেই বাঘের বিচরণ ছিল। পঞ্চাশের দশকে মধুপুর ও ভাওয়ালের জঙ্গলে বাঘ দেখা যেত বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়। বর্তমানে শুধু সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে, তা-ও অল্প সংখ্যায়। সেই বাঘগুলোও মারা যাচ্ছে নানাভাবে। খাদ্যের সন্ধানে ক্ষুধার্ত বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়লে মানুষের হাতে মারা পড়ে। চোরাশিকারিরা বিষ দিয়ে বাঘ মারে। সারা দুনিয়ায় কেনাবেচা নিষিদ্ধ হলেও বাঘ বা বাঘের হাড়, মাংস, চামড়া গোপন বা অবৈধ আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হচ্ছে। সেখানে একেকটি চামড়ার দাম কোটি টাকার ওপরে বলে জানা যায়। তাই চোরাশিকারিরা বাঘ হত্যায় খুবই তত্পর থাকে। সুন্দরবনের দুর্বল টহল বা ব্যবস্থাপনা চোরাশিকারিদের সেই সুযোগ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। যোগসাজশের অভিযোগও আছে।
প্রাকৃতিক নানা কারণেও সুন্দরবনের প্রকৃতি দ্রুত বদলাচ্ছে। সিডরে বনের ২৫ শতাংশের বেশি গাছপালা নষ্ট হয়েছিল। এরপর আইলার আঘাতেও কম ক্ষতি হয়নি। জাতীয় পশু বাঘসহ অনেক বন্য প্রাণী মারা গিয়েছিল। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণেও ক্ষতি হচ্ছে। তারপর আছে মানবসৃষ্ট নানা কারণ। অতিরিক্ত আহরণের ফলে গোলপাতার ঝোপ কমে যাচ্ছে। বাঘের লুকিয়ে থাকার জায়গা কমছে। দেদার হরিণ শিকারের ফলে বাঘের খাদ্যসংকট তৈরি হচ্ছে। চলছে অবাধে গাছ কাটা। নদী-খাল ভরাট ও শুকিয়ে যাওয়ায় বাঘ সহজেই লোকালয়ে এসে মারা পড়ছে। এ ছাড়া সুন্দরবনে ক্রমেই বাড়ছে মানুষের উপস্থিতি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, যা বাঘের অস্তিত্বের জন্য বড় হুমকি। তার ওপর যদি এভাবে চোরাশিকারিদের উত্পাত চলতে থাকে, তাহলে সুন্দরবনে বাঘের অস্তিত্ব বেশিদিন স্থায়ী হবে না বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সুন্দরবনে বন্য প্রাণীদের আবাসযোগ্যতা উন্নয়নে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। বাঘ আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এর সংরক্ষণে আমাদের উদ্যোগ ও আন্তরিকতা আরো বাড়াতে হবে।