শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখনো প্রবল। ইউরোপ, আমেরিকার অনেক দেশে চতুর্থ দফায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এশিয়ার দেশগুলোতে এখনো সংক্রমণের তীব্রতা রয়েছে। এই অবস্থায় সারা বিশ্বেই টিকার ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। নগদ অর্থ দিয়েও অনেক দেশ টিকা সংগ্রহ করতে পারছে না। বাংলাদেশেও টিকার সংকট তৈরি হয়েছিল। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রথম ডোজ দেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাচ্ছিল না টিকার অভাবে।
সেই সংকট কিছুটা কাটলেও টিকার সরবরাহ এখনো পর্যাপ্ত নয়। ছয় দিনের বিশেষ টিকা অভিযান পরিচালনার পর তা বন্ধ হয়ে গেছে। বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত টিকা হাতে এলে আবারও অভিযান শুরু করা হবে। অথচ টিকা নেওয়ার জন্য মানুষের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। কিন্তু টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলো চাহিদা অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করতে পারছে না। অথচ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দ্রুততম সময়ে বেশির ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া জরুরি। এ জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন দুই ডোজ টিকার, কমপক্ষে ২৭ কোটি ডোজ।
এ পরিমাণ টিকা কত দিনে পাওয়া সম্ভব, তা কেউ জানে না। এ জন্য বাংলাদেশ দেশেই টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে আসছিল। সেই উদ্যোগ অবশেষে বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার এ ব্যাপারে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উৎপাদনে যেতে দুই মাস লেগে যেতে পারে।
জানা যায়, চুক্তির আওতায় টিকার কাঁচামাল জোগাবে চীনের সিনোফার্ম। বাংলাদেশে এই টিকা উৎপাদন করবে বেসরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস। সমস্ত টিকাই তারা সরকারকে দিয়ে দেবে। রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের আলোচনাও এগিয়েছে। কিন্তু রাশিয়ায় করোনা মহামারি ব্যাপক রূপ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় কিছুটা ধীরগতি দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টিকা উৎপাদনের ওপরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া উচিত।
কারণ বাংলাদেশ টিকা সংগ্রহের জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়েও প্রয়োজনীয় টিকা পাচ্ছে না। চারটি ব্র্যান্ড মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে এসেছে মাত্র তিন কোটি ২০ লাখ ডোজ টিকা। অনেক দেশ টিকা দেবে বলেও দিতে পারছে না। ভারতের সেরাম থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনা হলেও ক্রয়চুক্তি অনুযায়ী টিকা এসেছে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ।
বাকি টিকা কবে আসবে তা-ও নিশ্চিত নয়। এদিকে দুই ডোজের পর অনেক দেশ তৃতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। তিন ডোজ নিতে হলে বাংলাদেশের টিকার প্রয়োজন হবে আরো অনেক বেশি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, করোনা শিগগিরই যাচ্ছে না। তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর আবারও টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এ অবস্থায় নিজেদের চাহিদা মেটাতে হলে বাংলাদেশকে উৎপাদনে যেতেই হবে। উৎপাদন বেশি হলে রপ্তানিরও সুযোগ থাকবে। আমরা আশা করি, দ্রুতই বাংলাদেশে টিকার উৎপাদন শুরু হবে।