সুস্থ পরিবেশের জন্য একটি দেশের স্থলভাগের কমপক্ষে ২৫ শতাংশে বনভূমি থাকা প্রয়োজন। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে আছে ৫ শতাংশেরও কম। তা-ও প্রাকৃতিক বনের বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে খুবই নিম্নমানের। সেই ৫ শতাংশ বনও ধ্বংস করার নানা রকম আয়োজন দ্রুত এগিয়ে চলেছে। প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের রাজকান্দি বন রেঞ্জের কুরমা বন বিটের সুনারায় বাঁশবাগানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়রা বলছে, আগুনে প্রায় তিন একর বন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত সোমবার বনের গভীরে আগুনের এ ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন অংশে এক ডজনের বেশি বনে আগুন লেগেছে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার চারটি সংরক্ষিত বনেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অনেকেরই ধারণা, বৃক্ষ চুরির প্রমাণ লোপাটসহ আরো কিছু কারণে পরিকল্পিতভাবে এসব আগুন লাগানো হয়।
বনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো অদ্ভুত প্রকৃতির। বৃহত্তর সিলেটে দেখা যায়, চা-বাগানের আশপাশে বনে আগুন লাগছে। স্থানীয়দের মতে, এর পেছনে রয়েছে চা-বাগান সম্প্রসারণের চক্রান্ত। আগুনে গাছের গুঁড়িগুলো এমনভাবে পুড়ে যায় যে তা আগে কাটা হয়েছে কি না তা বোঝার উপায় থাকে না। এ ছাড়া আগুনে ডালপালা পুড়ে গেলে পরে সেসব গাছ কেটে নিতে সুবিধা হয়।
সে কারণেও দুর্বৃত্তরা বনে আগুন লাগায় বলে অভিযোগ রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় মাটি কেটে নেওয়ার জন্যও বন পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আর শুধু আগুন নয়, আরো অনেকভাবেই বন ধ্বংস করা হচ্ছে। আইনে আছে, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। বাস্তবে দেখা যায়, বনের গা ঘেঁষেই রয়েছে অসংখ্য ইটভাটা।
সেগুলো সরকারি অনুমতিও পায়। অথবা ‘অবৈধ ইটভাটা’ হিসেবে দিনের পর দিন ব্যবসা করে যায়। এগুলোতে মূলত বনের কাঠ পোড়ানো হয়। আইন অনুযায়ী বনের কাছাকাছি করাতকল থাকতে পারবে না। অথচ এই আইনের বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে।
সাম্প্রতিক সময়ে বনের কাছাকাছি বিশেষ ধরনের চুল্লি বসানো হচ্ছে। এগুলোতে কাঠ পুড়িয়ে কাঠ-কয়লা বানিয়ে বিক্রি করা হয়। গত বছরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী শুধু টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আশপাশে এ রকম ৩৩টি চুল্লি দেখা গেছে।
চুল্লি রয়েছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায়ও। বনের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করার প্রতিযোগিতাও অনেক দিন ধরেই চলছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বন দখলকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার ৫৬৬।