কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে আবারও ভেসে এসেছে একটি অর্ধগলিত তিমি ও একটি ডলফিন। তিমিটির দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট এবং ডলফিনের দৈর্ঘ্য পাঁচ ফুটের মতো। ধারণা করা হচ্ছে, মাসখানেক আগে প্রাণীগুলোর মৃত্যু হয়েছে এবং ভাসতে ভাসতে এগুলো কুয়াকাটা সৈকতে চলে এসেছে। এভাবে প্রায়ই মৃত তিমি ও ডলফিন ভেসে আসে।
গত মে মাসেও একটি তিমি ভেসে এসেছিল এই সৈকতে। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরই কুয়াকাটা সৈকতে এক ডজনের বেশি মৃত ডলফিন এবং দুটি তিমি ভেসে আসার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কক্সবাজারের সৈকতে প্রচুর মৃত জেলিফিশ ভেসে আসছে। তিমি ও ডলফিন মৃত্যুর কারণ জানা না গেলেও বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, বঙ্গোপসাগরে দূষণের মাত্রা এবং আগ্রাসী মৎস্য শিকারের ঘটনা অনেক বেড়ে গিয়ে থাকতে পারে।
বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরাখবরে জানা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন উপকূলে ছয়টি তিমি এবং ৬০টি ডলফিন মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। মারা যাওয়া তিমিগুলোর মধ্যে একটি তিমির পেটে বড় ধরনের ফুটো ছিল এবং একটির দেহে ট্রলারের সঙ্গে আঘাত পাওয়ার চিহ্ন ছিল। এভাবে তিমি ও ডলফিন মৃত্যুর ঘটনায় বিশেষজ্ঞরা নানা ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অনেকের ধারণা, বঙ্গোপসাগরে দূষণের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। জানা যায়, উপকূলরক্ষী বাহিনীর নজরদারি সত্ত্বেও বঙ্গোপসাগরে চলাচলকারী জাহাজ থেকে বর্জ্য তেল বঙ্গোপসাগরের অরক্ষিত অঞ্চলে ফেলে দেওয়া হয়।
আবার প্লাস্টিকদূষণও সামুদ্রিক প্রাণীদের মৃত্যুর বড় কারণ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সময়ে মৃত প্রাণীদের পাকস্থলীতে প্লাস্টিক জমে থাকতে দেখা গেছে। অন্যদিকে ক্রমেই বাড়ছে গভীর সাগরে মাছ আহরণের পরিমাণ। জেলেদের জালেও অনেক সময় তিমি আটকে যায় এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয়। অনেক সময় বিভিন্ন দেশের জেলেরা তিমি, ডলফিন শিকারও করে থাকে।
ফলে গভীর সাগরে আঘাত পাওয়া তিমির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এসব প্রাণী ভাসতে ভাসতে উপকূলের কাছাকাছি চলে আসে। একসময় খাদ্যাভাবে এবং আঘাতের কারণে দুর্বল হয়ে পড়া এসব তিমির মৃত্যু হয়।
তিমি, ডলফিনসহ সামুদ্রিক প্রাণীদের রক্ষায় অনেক আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও কনভেনশন রয়েছে। বাংলাদেশও এসবের সঙ্গে যুক্ত। তাই বাংলাদেশকেও বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষায় আরো উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ বাড়াতে হবে।
অভিযোগ আছে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে এবং মৎস্য শিকার করে। তাদের গতিবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্লাস্টিক ও তেলের দূষণ রোধে দেশীয় উদ্যোগের পাশাপাশি আঞ্চলিক উদ্যোগ জোরদার করতে হবে।