এক শ্রেণির অসৎ ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ী বাজারে বিক্রয় করছেন ভেজাল মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এই ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ব্যবসা জমজমাট। এতে বহু জীবন অকালে ঝরে যাচ্ছে। নামিদামি ওষুধ কম্পানির জনপ্রিয় ওষুধ নকল করে বাজারজাত করছে একটি চক্র। কখনো কখনো নকল ও ভেজাল ওষুধের কারবারিরা ধরা পড়ে, ভেজাল ওষুধের কারখানা বন্ধ করা হয়। কিন্তু তাতে ভেজাল ওষুধ তৈরি বন্ধ হয়নি। ফলে অনেক ক্ষেত্রে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ মানুষের জীবনহানির কারণ হচ্ছে।
বাংলাদেশে নকল ও ভেজাল ওষুধ কী পরিমাণে তৈরি হয় তার কোনো নির্দিষ্ট তথ্যও সম্ভবত নেই। নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করার কাজে অনেক ছোট কম্পানিও জড়িত আছে—এমন তথ্য গণমাধ্যমে বহুবার এসেছে।
নানা ধরনের সিরাপ, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল নকল হচ্ছে। অনেক ট্যাবলেট-ক্যাপসুল পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেগুলোর ভেতরে সাধারণ আটা-ময়দা ছাড়া কিছুই নেই। সিরাপের মধ্যে আছে শুধু রং। সরল বিশ্বাসে ওষুধ কিনে প্রতারিত হয় ক্রেতা।
জীবন বাঁচায় যে ওষুধ, সেই ওষুধ অনেক ক্ষেত্রে জীবনহানির কারণ হয়। কেড়ে নেয় জীবন। এই ভয়ংকর প্রবণতা রোধ করা যাচ্ছে না কিছুতেই। মানুষের জীবন নিয়ে যে ব্যবসা, তার সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করার প্রশ্নই ওঠে না। এই প্রবণতা বন্ধে মন্ত্রিসভায় ওষুধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩ অনুমোদিত হয়েছে। গত বছরের ১১ আগস্ট ওষুধ আইন ২০২২-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
এই আইন অনুযায়ী ভেজাল ওষুধ উৎপাদন, বিক্রয়, বিতরণ বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে প্রদর্শন করলে যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ওষুধে ভেজাল মেশালে বা ভেজাল ওষুধ উৎপাদন, বিক্রয় ও মজুদ করার ক্ষেত্রেও যাবজ্জীবন শাস্তি পেতে হবে। অসৎ উদ্দেশ্যে ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরি করলেও যাবজ্জীবন পর্যন্ত শাস্তি দেওয়া যাবে।
এ ছাড়া লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্সে উল্লেখ করা শর্ত না মেনে ওষুধ উৎপাদন করলে, নিবন্ধন ছাড়া ওষুধ উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, বিক্রয়, বিতরণ, প্রদর্শন করলে, সরকারি ওষুধ বিক্রয় বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে মজুদ বা প্রদর্শন করলে, লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্সের শর্ত না মেনে ওষুধ আমদানি করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রয় করা যাবে না। কসমেটিকস বিক্রয়, আমদানি ও উৎপাদন করতে হলে লাইসেন্স নিতে হবে।
যেকোনো মূল্যে নকল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করা বন্ধ করতে হবে। মন্ত্রিসভা নতুন আইন অনুমোদন করেছে। এখন এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ দেখতে চাই আমরা।