স্ট্রোক বিশ্বব্যাপী একটি প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ এটি। প্রতিবছর প্রায় দেড় শ কোটি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ৫০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বাকি আক্রান্তদের একটি বড় অংশই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে কিংবা কথা বলা ও চলাচলে সমস্যাগ্রস্ত হয়।
বাকি জীবন অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ২০২১ সালেও আমাদের প্রতি ছয়জনে একজন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে ছিল, বর্তমানে এটি বেড়ে হয়েছে প্রতি চারজনে একজন। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানুষ সচেতন হলে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এবং ধূমপান-মদ্যপান বাদ দেওয়া ও জীবনযাপনের ধরন কিছুটা বদলানো গেলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব।
স্ট্রোক মূলত মস্তিষ্কের রক্তনালির রোগ। রক্তনালি দিয়ে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা রক্তনালি ফেটে যাওয়ার কারণেই রোগটি হয়। স্ট্রোকের উপসর্গ দেখা গেলে রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হয়। কারণ স্ট্রোক হলে প্রতি মিনিটে মস্তিষ্কের ১৯ লাখ নিউরন মারা যেতে থাকে।
যত দেরি হবে, রোগীর অবস্থা ততই খারাপ হবে। আজকাল শুধু শহরে নয়, গ্রামাঞ্চলেও প্রচুর যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসক রয়েছেন, যাঁরা প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা করতে পারেন। এরপর প্রয়োজন হলে তাঁরা রোগীকে বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠাবেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেটি করা হয় না। ফলে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।গতকাল ২৯ অক্টোবর সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল, ‘একসাথে আমরা স্ট্রোকের চেয়ে শক্তিশালী’। এ উপলক্ষে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল (নিনস) এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। এতে মিডিয়া পার্টনার ছিল কালের কণ্ঠ ও চ্যানেল আই। সেখানে বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্ট্রোক প্রতিরোধে জাতীয় ভিত্তিতে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন। তাঁরা জানান, দেশে নারীর চেয়ে পুরুষই বেশি স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন।প্রতি হাজারে যেখানে আটজন নারী আক্রান্ত হচ্ছেন, সেখানে পুরুষ আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় ১৪ জন। শহরের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন গ্রামের মানুষ। এ ক্ষেত্রে তাদের সচেতনতাও অনেক কম।প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগে এত বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ জন্য স্ট্রোক প্রতিরোধের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর জোর দিতে হবে। পাশাপাশি দেশব্যাপী চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের সুযোগ আরো বাড়াতে হবে।