বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক চরম দুঃসময় পার করছে। তার বড় কারণ রাজনীতিতে অর্থ আর পেশিশক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাব। রাজনীতিতে আদর্শ, জনকল্যাণ, আত্মত্যাগ ও নৈতিকতা ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। রাজনীতি হয়ে উঠছে বিত্তবৈভব অর্জনের হাতিয়ার। সমষ্টির কল্যাণের চেয়ে ব্যক্তির উদরপূর্তিই আজ রাজনৈতিক ধারা হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে একটি বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো সুনামগঞ্জের শাল্লায়। সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় স্থানীয় যুবলীগের এক নেতা গ্রেপ্তারের পর প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী লীগ কি সাম্প্রদায়িক হয়ে গেছে, নাকি সাম্প্রদায়িক কিছু মানুষ আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছে। শুধু শাল্লার ঘটনা নয়, গত ১২ বছরে তৃণমূল পর্যায়ে এমন অনেক ঘটনার উদাহরণ টানা যাবে, যা স্থানীয়ভাবেই শুধু নয়, জাতীয় পর্যায়েও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করে।
আদর্শভিত্তিক রাজনীতি, সুশাসন ও দেশের উন্নয়ন হাত ধরাধরি করে চলে। আদর্শচ্যুত রাজনীতিও সমাজ বা রাষ্ট্রকে কিছু দেয় না। নেতৃত্ব অযোগ্য, অদক্ষ হলে সৃষ্টি হয় নৈরাজ্য।
স্বাধীনতা লাভের পর গত পাঁচ দশকে সময় যত গড়াচ্ছে, ততই যেন রাজনীতি আদর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। প্রধান দলগুলোতে গণতন্ত্র চর্চাহীনতার সুযোগে সুযোগসন্ধানীরা ঢুকে পড়ছে। স্বজনপ্রীতি আর প্রশ্রয়নির্ভর রাজনীতিতে থাকে না জবাবদিহিরও বালাই। ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের দখলবাজি, টেন্ডারবাজির খবর গণমাধ্যমগুলো হাতে তুলে দিলেও পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের খুব একটা টনক নড়ে না। অথচ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতির গুণগত মানের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের উন্নতি বা অবনতি। রাজনীতি পচনশীল হলে রাষ্ট্র উন্নয়নের বদলে উল্টোপথে হাঁটে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে চাই আদর্শ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। শুদ্ধিকরণের মাধ্যমেই তরুণ প্রজন্ম থেকে যোগ্য ও শিক্ষিত মুখকে রাজনীতিতে আকৃষ্ট করতে হবে। এ ছাড়া বর্তমানে যারা দলের নাম ভাঙিয়ে আখের গোছাচ্ছে, তাদের লাগাম টেনে ধরলে অন্যদের জন্যও তা শিক্ষণীয় হবে। অসুস্থ রাজনীতি থেকে মুক্তি না ঘটলে সবাইকে সামনে আরো বড় মূল্য দিতে হবে এবং তখন পরবর্তী প্রজন্মও আমাদের ক্ষমা করবে না।
মাটির প্রতি, মানুষের প্রতি টান না থাকলে কেউ জনদরদি রাজনীতিক হতে পারেন না। আমাদের রাজনীতিতে আজ জনদরদি রাজনীতিকের অভাব ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি সুস্থ গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। রাজনীতিকে রাজনীতির মতো চলতে দিতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। প্রত্যেকেই যদি নিজের কাজের প্রতি যত্নশীল হয়, তাহলে তা সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রাজনীতি পরিশুদ্ধ হবে। ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলকে নতুন করে সাজাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।