জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০১৭ সালে পি৪জি নামে এই বৈশ্বিক উদ্যোগ শুরু হয়। গত রবিবার দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে দুই দিনব্যাপী ‘গ্রিন গ্রোথ অ্যান্ড গ্লোবাল গোলস পি৪জি সামিট’-এর দ্বিতীয় পর্বের লিডারস সেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারণ করা ভাষণ সম্প্রচার করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খোয়াছিয়াং, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন, উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শওকত মির্জা ওয়েব এবং চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ানসহ বিশ্বের অন্য নেতারা সম্মেলনের ভার্চুয়াল লিডারস অধিবেশনে বক্তব্য দেন।
পি৪জির পাঁচটি মূল ক্ষেত্রে আরো বিনিয়োগকারী, উদ্ভাবক, নীতিনির্ধারক ও সৃজনশীল উদ্যোক্তাদের জড়িত এবং সর্বোত্তম অনুশীলন বিনিময় করতে কর্মমুখী আবেদনের ভিত্তিতে আরো প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আগামী প্রজন্মের সবুজ ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও কর্মমুখী পদ্ধতির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, খাদ্য, পানি, জ্বালানি, নগর, চক্রাকার অর্থনীতি—এই পাঁঁচটি ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী, নীতিনির্ধারক ও সৃজনশীল উদ্যোক্তাদের আরো বেশি সম্পৃক্ত করা এবং এসব ক্ষেত্রে সর্বোত্তম অনুশীলন বিনিময় করে কর্মমুখী আবেদনের ভিত্তিতে আরো প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। তিনি জোর দিয়েছেন সবুজ প্রবৃদ্ধি এবং বিশ্বের লক্ষ্য ২০৩০ অর্জনের পাশাপাশি পুরো সমাজপদ্ধতির আবেদনের প্রয়োজনীয়তার ওপর।
২০২১ পি৪জি সিউল শীর্ষ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে কার্বন নিরপেক্ষতার দিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক সবুজ পুনরুদ্ধার। একটি পরিবেশবান্ধব টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সবুজ অর্থনীতি। পি৪জির কাজের ক্ষেত্রে পানি বাংলাদেশের অন্যতম মূল্যবান সম্পদ উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ নামে একটি ১০০ বছরের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। পানির দক্ষ ব্যবহার ও সংরক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান তথা ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’কে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে সরকার। জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমন ব্যবস্থার জন্য প্রায় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রথম স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে নিজেদের সম্পদ দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে।
টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত সবুজ অর্থনীতি। এতে নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দারিদ্র্য দূর করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে সবুজ প্রবৃদ্ধি। আমরা সবুজের দিকে গেলে বন উজাড় হবে না। নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট হবে না। কলকারখানার দূষণ বন্ধ করা গেলে কার্বন নিঃসরণ বাড়বে না। পরিবেশ দূষিত হবে না। প্রতিবেশ বিনষ্ট হবে না। আগামী প্রজন্মের জন্য সেই সবুজ ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার নতুন করে ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।