এমনিতেই লাগামহীন মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট ভোক্তারা টিকে থাকার লড়াই করছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, তারা সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। অনেক কারখানা সময়মতো বেতন দিতে পারছে না।
এখন কোনো কোনো পণ্যের ওপর বিভিন্ন হারে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে।আবার ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পে ভ্যাটছাড় তুলে দিতে যাচ্ছে এনবিআর। ব্যবসায়ী ও খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এতে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ভোক্তাদের আরো বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে। যেমন—চুনাপাথরের আমদানি পর্যায়ে ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া আছে। নতুন করে এই হারে কর আদায় করতে চাইলে প্রভাব পড়বে সিমেন্ট, নির্মাণ, রাসায়নিক, কাচ ও চিনি শিল্পে। সিমেন্ট খাতের সব প্রতিষ্ঠান সংকটে আছে। এখন যদি এনবিআর ভ্যাট বাড়ায়, তাহলে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। মোবাইল ফোনসেটের আমদানি ও উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে, সেটি তুলে দিয়ে নিয়মিত ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের চিন্তা করছে এনবিআর। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত, এতে সাধারণ মানুষের জন্য মোবাইল ফোন কেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। ব্যবসায়ীরাও নতুন করে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন না। এতে কর্মসংস্থানও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সরকারের করছাড় ও অন্যান্য সুবিধা পেয়ে একসময়ের আমদানিনির্ভর রেফ্রিজারেটর এখন দেশীয় শিল্পে পরিণত হয়েছে। এতে সাশ্রয়ী মূল্যে সাধারণ মানুষ পণ্য কিনতে পারছে। দেশে অসংখ্য শিক্ষিত মানুষের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এনবিআর চায় এই খাতে ১০ শতাংশ ভ্যাট বসিয়ে ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে। এই সিদ্ধান্তে রেফ্রিজারেটরের দেশীয় বাজার নষ্ট হয়ে আমদানি করা পণ্য সহজলভ্য হবে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ভ্যাট বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর তালিকায় আছে স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার। ভ্যাট বাড়ালে দাম বাড়বে এবং পণ্য ব্যয়বহুল হবে।ব্যবসায়ী ও খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন করে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হলে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ভোক্তাদের আরো বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। বাজার ব্যবস্থাপনায় চাপ পড়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। এনবিআরের এই উদ্যোগ আরেক দফা পণ্যমূল্য বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করছে।