দেশে মিঠা পানির মাছের সবচেয়ে বড় ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত হাওরগুলোর আজ শোচনীয় অবস্থা। নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল এবং অত্যন্ত ক্ষতিকর বেড় জালে ছেয়ে গেছে হাওরগুলো। মা মাছের পাশাপাশি ছেঁকে তুলে আনা হচ্ছে পোনা মাছ। শুধু মাছ নয়, উঠে আসছে সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, কাছিম, শামুকসহ নানা ধরনের জলজ প্রাণী।
ডাঙায় তুলে হত্যা করা হচ্ছে এসব জলজ প্রাণী। নষ্ট হচ্ছে বহু প্রজাতির জলজ উদ্ভিদও। অথচ প্রশাসন নির্বিকার। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অতিরিক্ত আহরণের ফলে হাওরের জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির সম্মুখীন। এভাবে চলতে থাকলে হাওরাঞ্চলের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে।
১৯৯৯ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় বিস্তৃত হাকালুকি হাওরকে পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করেছিল। এর জন্য দায়ী কারণগুলোর অন্যতম ছিল অতিরিক্ত আহরণ এবং বাঁধ দিয়ে বা অন্যান্য উপায়ে হাওরের স্বাভাবিকতা নষ্ট করা। সেই কারণগুলো এখনো বিদ্যমান এবং অতিরিক্ত আহরণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে নিষিদ্ধ জালসহ ক্ষতিকর আহরণ পদ্ধতি। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজারের বাইক্কাবিল, হাকালুকি, কাউয়াদিঘিসহ অন্যান্য হাওর ও নদীতে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে অবাধে মাছ ধরা হচ্ছে। এ ছাড়া নির্বিচারে ধরা হচ্ছে পোনা মাছ ও ডিমওয়ালা মা মাছ। স্থানীয় হাট-বাজারে পোনা মাছ কেনাবেচা হয়। প্রতিদিন বহু টন পোনা মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনও করা হয়।
শুধু জাল দিয়ে ছেঁকে তোলা নয়, শুষ্ক মৌসুমে হাওরে ভেসে ওঠে অসংখ্য বিল। আবার বাঁধ দিয়েও মাছের ঘের বা খাদ পুকুর তৈরি করা হয়। সেচযন্ত্র বসিয়ে এসব বিল বা খাদ পুকুর সম্পূর্ণ শুকিয়ে মাছ ধরা হয়। এতে মাছের পাশাপাশি অন্যান্য জলজ প্রাণীরও মৃত্যু হয়। এমনকি হাওরে থাকা গাঙ, নদী, খালের উজানে বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়িয়ে দিয়ে মাছ ধরা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বছরের পাঁচ মাস ২৩ সেন্টিমিটারের (৯ ইঞ্চি) চেয়ে কম আকারের মাছ ধরা ও বিক্রি করা নিষিদ্ধ। কারেন্ট জাল, কম ব্যাসের ছিদ্রযুক্ত জাল ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করবে কে? হাওরের আশপাশের হাট-বাজারগুলোতে অবাধে কারেন্ট জাল কেনাবেচা চলে। অভিযোগ আছে, মৎস্য বিভাগের লোকজনের সঙ্গে যোগসাজশেই চলে এসব অবৈধ কারবার। মাঝেমধ্যে তারা অভিযানে যায়। অবৈধ উপায়ে মৎস্য আহরণকারী ও কারেন্ট জাল কেনাবেচাকারীরা আগেই সে খবর পেয়ে যায় এবং সরে পড়ে।
মিঠা পানির মৎস্যভাণ্ডার তথা হাওরগুলোর মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। আমরা চাই, নিষিদ্ধ জাল ও ক্ষতিকর পদ্ধতির মৎস্য আহরণ অবিলম্বে বন্ধ করা হোক।