শীত মৌসুমে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ অনেক বেড়ে যায়। দেখা দেয় অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, কোল্ড ডায়রিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত অন্যান্য রোগও। সাধারণত শিশু ও বৃদ্ধরাই এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, চলতি শীত মৌসুমের তিন মাসে (গত ১৪ নভেম্বর থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে চিকিৎসা নিয়েছে চার লাখ ৮৯ হাজার ৯৪০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১০৯ জনের। এর মধ্যে শুধু শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণেই মৃত্যু হয়েছে ১০৬ জনের। আর তিনজন মারা গেছে ডায়রিয়ায়।সাম্প্রতিক সময়ে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। এর একটি বড় কারণ মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণ। বিশ্বের বড় শহরগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা প্রায় এক নম্বরে থাকছে। দেশ হিসেবেও বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বাতাসে থাকা অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুস ও রক্তে মিশে যাচ্ছে। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। শ্বাসতন্ত্রের নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নানা ধরনের জীবাণু। সৃষ্টি হচ্ছে নানা ধরনের সংক্রমণের। কয়েক বছর আগে ঢাকায় পরিচালিত ফুসফুসের সক্রিয়তা বা পিএফটি (পালমোনারি ফাংশন টেস্ট) পরীক্ষাভিত্তিক এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকার ২৩.৪৭ শতাংশ মানুষ ফুসফুসের কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত। ফলে বাড়ছে মৃত্যু। কমছে মানুষের আয়ু। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এমন চিত্র। এতে দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু কমেছে দুই বছরের বেশি। আর বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে সাত বছরের মতো এবং রাজধানী ঢাকায় কমেছে আট বছরের বেশি। তার পরও বায়ুদূষণ রোধে আমাদের সমন্বিত কর্মসূচি প্রায় অনুপস্থিত। সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে করোনা মহামারির পর শ্বাসতন্ত্রের রোগ অনেক বেশি দুর্ভোগ ও প্রাণহানির কারণ হয়ে উঠেছে। শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণের জন্য দায়ী পুরনো অনেক ভাইরাস নতুন রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছে। আগে এই ভাইরাসে লঘু উপসর্গ দেখা যেত। খুব একটা চিকিৎসারও প্রয়োজন হতো না। এখন আক্রান্তদের বেশির ভাগেরই অক্সিজেন সহায়তার প্রয়োজন হচ্ছে। সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা, এভিয়ান ফ্লু ইত্যাদি এখন অনেক বেশি ভোগাচ্ছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মনে করেন, শ্বাসতন্ত্রের রোগ নিয়ন্ত্রণে এবং রোগী ব্যবস্থাপনায় আমাদের অনেক বেশি উদ্যোগ প্রয়োজন। বায়ুদূষণের উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।