বাংলাদেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। শুধু শহুরে কিংবা নাগরিক জীবন নয়, দেশের সর্বত্রই নারীর গুরুত্ব আজ স্বীকৃত। তুলনামূলক বিচার করলে দেখা যাবে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন অনেক বেড়েছে। সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক সূচকে, সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশের যে বিস্ময়কর উত্থান, তার পেছনেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে নারী।
২০১৯ সালের বৈশ্বিক লিঙ্গ বিভাজন সূচক বা গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স প্রতিবেদনও সেই কথাই বলছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বে ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৫০তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্বেও নারীর এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী ২০১৪ সালে মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে এক হাজার ৭৯৫ জন নারী দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ১২৩। ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির বিভিন্ন পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত নারী কর্মকর্তার হার ২২.৩ শতাংশ। দ্বিতীয় শ্রেণির নারী কর্মকর্তার হার এর প্রায় দ্বিগুণ, ৪৩.৪ শতাংশ। ২০১৭ সালে বিভাগীয় ও ডেপুটি কমিশনার (প্রথম শ্রেণির) নারী কর্মকর্তার হার ২৭ শতাংশ। বিবিএসের তথ্যমতে, ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদে নারী চেয়ারম্যানের হার ছিল ০.৬ শতাংশ। ২০১৭ সালে এই হার বেড়ে ১.২ শতাংশে দাঁড়ায়। ওই বছর ৩১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন নারী। ২০১৪-২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী উপজেলা পরিষদে নারী ভাইস চেয়ারম্যানের সংখ্যা ৪৮৬ জন।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক এমনকি মনস্তাত্ত্বিক ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকা সত্ত্বেও নারী দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে বাংলাদেশে এখনো এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে নারী উপেক্ষিত। সামাজিকভাবেও নারীর অবস্থান সেভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়নি। আমরা একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখতে পাই, এ দেশে ডাকসুর ভিপি ছিলেন একজন নারী। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তো বটেই, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও বাঙালি নারী পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন। বাংলাদেশের একজন নারী আন্তর্জাতিক দাবায় গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাব পেয়েছেন। এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন বাংলাদেশের নারী।
তার পরও নারীকে অনেক ক্ষেত্রেই এখনো অবজ্ঞা করা হয়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে শিক্ষা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পাশাপাশি পুরুষের মনোজগতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে।