বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, কিন্তু সেই তুলনায় বাড়ছে না কর্মসংস্থান। ফলে বাড়ছে বেকারত্ব। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন ব্যাপক শিল্পায়ন। কিন্তু শিল্পায়নের গতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় এগোচ্ছে না। এর একটি বড় কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, জমির দুষ্প্রাপ্যতা এবং জমির নিবন্ধন ও নামজারিতে অযৌক্তিক কালক্ষেপণ ও হয়রানি। এ নিয়ে অতীতে গণমাধ্যমে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকেও আপত্তি জানানো হয়েছে। প্রতিকারের দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু অবস্থার বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং ক্ষেত্র বিশেষে অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে জমির নিবন্ধন ও নামজারিতে বিদ্যমান দুর্ভোগের চিত্র। এই দুর্ভোগের কারণে অনেক উদ্যোক্তাই চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং এর প্রতিকার চেয়েছেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছরের ১৪ নভেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কম্পানির নামে নামজারি করার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হবে। আর এই বিজ্ঞপ্তির কারণেই সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের এক আমলাতান্ত্রিক জটিলতার। যাদের প্রকল্প অনুমোদন নেওয়া ছিল, তাদেরও এখন জমি খারিজের জন্য অনুমতি নিতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনের পর তাঁরা পাঠাবেন সহকারী কমিশনারের কাছে। সেখান থেকে জরিপ করে প্রতিবেদন পাঠানো হবে জেলা প্রশাসকের কাছে।
প্রতিবেদন বিবেচনার পর আবেদনটি পুনরায় সহকারী কমিশনারের কাছে পাঠানো হবে। শুধু তখনই শুরু হবে খারিজের প্রক্রিয়া। চলে যাচ্ছে দীর্ঘ সময়। এতে জমি কেনাবেচায় যেমন হয়রানি-দুর্ভোগ বেড়েছে, তেমনি নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন কমে যাওয়ায় সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে শিল্পের জন্য জমি কিনতে গিয়ে নানামুখী জটিলতায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কম্পানিগুলো। অথচ আগে নামজারি করার জন্য শুধু সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে আবেদন করলেই হতো। সময়ের অপচয় কমানোর জন্যই সরকার অনলাইনে নামজারির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু তার সুফলও ভেস্তে গেছে নতুন এই বিজ্ঞপ্তির কারণে।
২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে দেখা যায়, ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। আশপাশের অনেক দেশের তুলনায়ও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এরও প্রধান কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরকার ওয়ান স্টপ সার্ভিসসহ অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু অবস্থার কি খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে? বরং আমলাতন্ত্র নতুন নতুন জটিলতা তৈরি করে সময়কে দীর্ঘায়িত করছে। এটি দেশ ও দেশের শিল্পায়নের জন্য ক্ষতিকর হচ্ছে। আমরা ভূমির নামজারির ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতার অবসান চাই।