বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। কামানের গোলা ও বুলেট এসে বাংলাদেশে পড়ছে। বাংলাদেশে এরই মধ্যে কয়েকজন হতাহত হয়েছে। লড়াইয়ে টিকতে না পেরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তিন শতাধিক সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এমন পরিস্থিতিতেও থেমে নেই মাদক চোরাচালান। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা গত শুক্রবার সকালে টেকনাফের সাবরাং থেকে তিন লাখ ইয়াবার একটি চালান জব্দ করেছেন। একই দিন বিকেলে বিজিবি রঙ্গিখালী সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক কেজির ওপর ক্রিস্টাল মেথ (আইস) জব্দ করে।
কোনো কোনো মহল থেকে মাদকের পাশাপাশি অস্ত্র চোরাচালানেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।মিয়ানমারের পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের একটি বড় অংশ নিজেদের দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। সীমান্তের মিয়ানমার অংশে বিজিপির পাহারা নেই বললেই চলে।এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তের এক পাশ চোরাচালানিদের জন্য প্রায় অবারিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যথেষ্ট সতর্ক। তার পরও মাদকের চালান ঢুকছে। আরো কিছু উদ্বেগজনক খবরও আসছে গণমাধ্যমে। জানা গেছে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন তার দলবল নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় বাংলাদেশে ঢুকে গেছে।
তাদের ২৩ জন ধরাও পড়েছে এবং বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এই নবী হোসেন আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ) নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা। তারা মূলত মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানে জড়িত। এ ছাড়া ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, খুনসহ আরো অনেক অপরাধের অভিযোগ আছে। প্রায় দুই বছর আগে নবী হোসেনকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল।সম্প্রতি এআরএর ফেসবুক পেজে আপলোড করা ছবিতে দেখা যায় নবী হোসেন বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এগুলো নাকি মিয়ানমারের বিজিপির কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এসব অস্ত্র বাংলাদেশে পাচার করা হতে পারে।মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে গোলাবারুদ এসে পড়ার মতো আশঙ্কা থাকবেই। তাই সীমান্তের কাছাকাছি বা ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে।মিয়ানমারের অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে সন্ত্রাসী কিংবা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানকারীরা যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সীমান্তে নজরদারি আরো বাড়াতে হবে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সেনা ও বিজিপি সদস্যদের যত দ্রুত সম্ভব ফেরত পাঠাতে হবে।