বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেকোনো নির্মাণের প্রথম নীতিই হচ্ছে ‘নিরাপত্তাই প্রথম’। অর্থাৎ কমপ্লায়েন্সগুলো সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমরা দেখি, দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হয় না।
গত সোমবার ঢাকার উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলাকালে ক্রেন থেকে উড়ালসেতুর একটি গার্ডার পড়ে প্রাইভেট কারের পাঁচ আরোহী নিহত হন।
এর আগে ১৫ জুলাই গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় ক্রেন থেকে ‘লঞ্চিং গার্ডার’ পড়ে নিহত হন একজন। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট, ঢাকার মালিবাগেও এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। কোনো রকম নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়া কাজ করার সময় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এর পরও কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেতন হয়েছে? হয়ে থাকলে কোনো রকম নিরাপত্তা ছাড়া কাজ চলে কী করে? প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গাজীপুরের টঙ্গীতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের টঙ্গী বাজার উড়ালসেতু অংশে বিশাল ক্রেন দিয়ে নির্মীয়মাণ পিলারে ওঠানো হচ্ছে টনকে টন রড, লোহার প্লেট, স্টিলের ফর্মা। নিচ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ছোট-বড় নানা ধরনের যানবাহন ও পথচারী। নেই ন্যূনতম নিরাপত্তাব্যবস্থা। গাজীপুরের সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকা চান্দনা চৌরাস্তায় একাধিক উড়ালসেতুর কাজ চলছে। নিচ দিয়ে চলছে হাজারো যানবাহন ও পথচারী। অথচ নেই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে জেনেও কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ বলে প্রকাশিত খবরে প্রকাশ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, নিরাপত্তার বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। তারা আমলেই নিচ্ছে না। তারা মহাসড়ককে মৃত্যুফাঁদে পরিণত করেছে।
সারা বিশ্বে ঝুঁকি এড়িয়ে এই নির্মাণের কাজটি করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে নির্মাণকাজের প্রায় প্রতিটি স্তরেই গাফিলতি দেখা যায়। বিশেষ করে সরকারি কাজের ক্ষেত্রে এই গাফিলতি বেশি। নির্মাণকাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ঠিকাদার বা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায় অবশ্যই আছে। কিন্তু বাস্তবায়নকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই দায়টা এড়াতে পারে না। কারণ তাদের দায়িত্ব হচ্ছে কাজটি সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে কি না, সেটা নিশ্চিত করা।
বিআরটি গাজীপুর অংশের চলমান কাজ প্রসঙ্গে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিআরটি কর্মকর্তাদের একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। বিআরটি প্রকল্পের টঙ্গী অংশের প্রকল্প পরিচালকও ঠিকাদারি ও কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণ নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়া কাজ করতে নিষেধ করেছেন। এর পরও কিভাবে নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই কাজ চলছে?
জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতার অভাবই নির্মাণকাজে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ, এ ধারণা বিশেষজ্ঞদের। বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনা ঘটলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কোনো দায়ভার নিতে হয়নি। কোনো জবাবদিহির মধ্যেও তারা আসেনি।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিরাপত্তার চর্চাগুলো অনুসরণ করে বিআরটি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হোক।