আমাদের সমাজ থেকে নৈতিকতা নির্বাসিতপ্রায়। ফলে মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে। সমাজের পরিচয় যেন পাল্টে যাচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, ধর্ষণকারীরা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
প্রতিবাদ-আন্দোলনের মুখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে। কিন্তু ধর্ষণ বন্ধ হয়নি। প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ছোট শিশুরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কেন? গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরই বলছে, কঠোর আইন থাকলেও মামলা করা থেকে শুরু করে তদন্ত, সাক্ষ্য-প্রমাণ, বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদি কারণে মামলাগুলো বছরের পর বছর ঝুলে থাকে।
অভিযোগ দায়েরে দেরি হওয়া, সঠিকভাবে সঠিক সময়ে আলামত সংরক্ষণ না করা, অর্থাৎ পরীক্ষার আগেই ধর্ষণের শিকার নারীর দেহ, পোশাকসহ আলামত ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলা, ফরেনসিক পরীক্ষায় দুর্বলতা, অভিযোগের সপক্ষে জোরালো সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাব বা ভয়ে-চাপে সাক্ষী অনুপস্থিত থাকা, মামলার তদন্তে পুলিশের অবহেলা, অদক্ষতা, দুর্বলতা বা সঠিক তদন্ত না হওয়ায় রেহাই পেয়ে যান ধর্ষণে অভিযুক্তরা। বিচার পান না ধর্ষণের শিকার নারীরা।
অভিযোগ আছে, তদন্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণে আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়সীমা ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয় না। ফলে দ্রুতবিচার আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনে বিচার সম্পন্ন করা যায় না। অবশ্য ২০২০ সালে দ্রুততম সময়ে ফৌজদারি মামলার রায় ঘোষণার একটি অনন্য নজির স্থাপিত হয়েছিল। মাত্র সাত কর্মদিবসে শিশু ধর্ষণ মামলার রায় দিয়েছিলেন বাগেরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আন্তরিক থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে যে বিচারকাজ শেষ হতে পারে, এটি ছিল তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
নারী নির্যাতন-ধর্ষণের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সামাজিক অনুশাসন ও মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি তেমনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠারও কোনো বিকল্প নেই। সব ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে।