করোনাভাইরাস প্রতিনিয়ত তার রূপ বদলায়, তৈরি হয় ভাইরাসের নতুন নতুন ধরন। এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে ক্ষতিকর দুটি ধরন পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সেগুলো হলো যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা ধরন। বাংলাদেশেও এ দুটি ধরনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, ধরনগুলো বাংলাদেশে এলেও খুব একটা ছড়াতে পারেনি। দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত ও পৃথক করা হয়েছে। এদিকে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশে একটি নতুন ধরন তৈরি হয়েছে। উপসর্গ থেকেও তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত হতে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভাইরাসের নতুন নতুন ধরন সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আরো বেশি গবেষণা প্রয়োজন। নিয়মিত করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা জরুরি।
দেশে হঠাৎ করেই সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা। হঠাৎ করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি পুরনো কোনো ধরনের নতুন বিস্ফোরণের কারণে হতে পারে। অথবা নিজস্ব ধরন তৈরি হওয়ার কারণেও এমনটা হতে পারে। সংক্রমণের গতি কমাতে হলে সংক্রমণ ছড়ানোর সঠিক কারণ জানা জরুরি। বিজ্ঞানীরা সে চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে গবেষণার পরিধি আরো বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পরীক্ষার হার অনেক বাড়াতে হবে। তা না হলে অপেক্ষাকৃত ক্ষতিকর ধরনগুলো নীরবে ছড়াতে থাকবে। একই সঙ্গে করোনা রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ ও কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে পরীক্ষা বিবেচনায় আক্রান্তের হার ২ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছিল। তখনই বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে মার্চ মাসে আবার করোনা আক্রান্তের হার বেড়ে যেতে পারে। সে আশঙ্কাই সত্য হয়েছে। আক্রান্তের হার এরই মধ্যে ১০ শতাংশের কাছাকাছি চলে গেছে।
মানুষ এখন মাস্ক পরাসহ জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বললেই চলে। ছুটির দিনগুলোতে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না এবং প্রায় কেউই মাস্ক পরেন না। মার্কেট, বিপণিবিতানগুলোতে আগে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল, এখন আর সেসব ব্যবস্থা দেখা যায় না বললেই চলে। গণপরিবহনগুলোতে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হয় এবং বেশির ভাগ যাত্রীই মাস্ক পরেন না। তাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে কিভাবে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামাজিক দূরত্ব ও জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এরই মধ্যে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে এবং প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রগুলোও (আইসিইউ) রোগীতে ঠাসা। ফলে অতি জরুরি হলেও আইসিইউতে নতুন রোগী স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। এসব কারণে করোনা চিকিৎসায় বড় সংকট তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দ্রুত সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনায় নিবেদিত ওয়ার্ড, শয্যাসংখ্যা ও আইসিইউ সেবার সুযোগ বাড়াতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার মানোন্নয়ন ও সেবামূল্য যৌক্তিক করতে হবে।