দেখিয়ে দেয় সক্ষমতা। গত ৩০ জুন এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। গত শনিবার ছিল পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠান।২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১০ হাজার কোটি টাকায় কেবল কংক্রিটের সড়ক সেতু করার প্রস্তাব অনুমোদন হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে নকশা পরিবর্তন করে। ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর মূল পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকায় নির্মিত ৬.১৫ কিলোমিটার সেতুটি ২০২২ সালের ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে নিয়মিত গাড়ি চলছে। ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটিতে যুক্ত থাকার কথা ছিল উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর। পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সংস্থাগুলো।২০১৪ সালের নভেম্বরের শেষে সেতুর কাজ শুরু হয়। আট বছর পর চালু হয় সড়ক যোগাযোগ।পদ্মা সেতু সত্যিকার অর্থেই এক স্বপ্ন। সেতু উদ্বোধনের পর পদ্মার দুই পারে মানুষের যে উচ্ছ্বাস, যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখা গিয়েছিল, এককথায় তা অনন্য। পদ্মা-স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পর দুই পারের মানুষ নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। এ স্বপ্ন এক নতুন দিনের, নতুন শুরুর। সমৃদ্ধির এক নবযাত্রার নতুন ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ। পুরো দেশ একটি রেখায় যুক্ত হয় পদ্মা সেতুর মাধ্যমে। অথচ পদ্মা সেতুর কাজ যখন শুরু হয়, তখন থেকেই অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তখন অনেকেই বলেছিল, এই দুঃসাহস দেখানো অর্থহীন। দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বলেছিলেন, দেশের মানুষ সঙ্গে থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাবেন তিনি। দেখিয়েছেন। সেদিনের কথা উল্লেখ করে সমাপনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশবাসী পাশে ছিল বলেই জ্ঞানী-গুণীদের বাধা সত্ত্বেও সব অতিক্রম করে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে এখন আমরা বুক ফুলিয়ে গর্বের সঙ্গে চলছি।’ ‘আগামী দিনে যত বাধাই আসুক, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ’—এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। তাঁর বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অনেক ঝড়ঝাপটা পার করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে হয়েছে।’পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার ও মর্যাদার প্রতীক। বিশ্বাস ও আত্মশক্তির প্রতীক। বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় পদ্মা সেতু এক নতুন বার্তা দিয়েছে। দেখিয়েছে, চ্যালেঞ্জকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করার ক্ষমতা এই দেশটি রাখে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পদ্মা সেতু যে সম্ভাবনার সূচনা করেছে, সেই সম্ভাবনাকে সত্যি করতে হবে।