সুস্থ পরিবেশে এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে জীবনযাপনের জন্য একটি দেশে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বনভূমি প্রয়োজন। বাংলাদেশে বনভূমি আছে ৫ শতাংশের কাছাকাছি। বনের ঘনত্ব ও চরিত্র বিবেচনায়ও সেগুলো যথেষ্ট মানসম্মত নয়। তদুপরি প্রতিনিয়ত কমছে বনভূমির পরিমাণ।
প্রায়ই গণমাধ্যমে আসছে বন ধ্বংসের খবর। এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ভোলার মনপুরা উপজেলায় থাকা ৩০ হাজার একর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে চলছে গাছ কাটার হিড়িক। কেওড়া, বাইন, সুন্দরী, গেওয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। বন বিভাগ এ পর্যন্ত গাছ চুরির জন্য ১৯৫টি মামলা করেছে। কিছু আসামিকে আটকও করা হয়েছে। এর পরও থামছে না দুর্বৃত্তদের হানা। এমন অবস্থায় মনপুরার এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল টিকে থাকবে কি না তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। অস্তিত্ব সংশয়ে রয়েছে হরিণ, বুনো মহিষসহ সেখানকার বন্য প্রাণী।
সারা দেশেই বনাঞ্চলগুলোর দুরবস্থা চোখে পড়ার মতো। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য কক্সবাজারের বনাঞ্চল প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। সারা দেশেই বনাঞ্চলগুলোর পাশে রয়েছে অসংখ্য ইটখোলা। এসব ইটখোলায় মূলত বনের কাঠ পোড়ানো হয়। বনের কাছেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য করাতকল। সারা রাত এসব করাতকলে বনের কাঠ চেড়ানো হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে কাঠকয়লা একটি লাভজনক পণ্য হয়ে উঠেছে। ফলে বনের কাছেই গড়ে উঠেছে বহু চুল্লি, যেগুলোতে বনের কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানো হয়। এভাবে চলতে থাকলে সামান্য যে বনভূমি অবশিষ্ট আছে, তা-ও টিকে থাকবে না। অন্যদিকে বনকর্মীর সংখ্যা খুবই কম। কয়েকজন কর্মীর পক্ষে কয়েক বর্গকিলোমিটার বন পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না। বিশেষ করে রাতে নিরস্ত্র কর্মীদের পক্ষে বন পাহারা দেওয়া নিরাপদও নয়। এর আগে বনকর্মীদের ওপর হামলার অনেক ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে বনকর্মীদের অসততা বা দুর্নীতিও বন ধ্বংসে খুব কম ভূমিকা রাখছে না।
দেশের মানুষের স্বার্থে অবশিষ্ট বনভূমি রক্ষায় রাষ্ট্রের বিশদ পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে ব্যাপক উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রচলিত আইন অনুযায়ী বনাঞ্চলের তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটখোলা কিংবা করাতকল থাকতে পারে না।
কিন্তু বাস্তবে বনের গা ঘেঁষেই রয়েছে অনেক ইটখোলা। এসব ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে আরো তৎপর হতে হবে। বনসংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত সুরাহা করতে হবে। আমরা আশা করি, মনপুরার বনভূমি রক্ষায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।