ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কজন নাগরিক সেই অধিকার ভোগ করতে পারে? বছরের পর বছর কেটে যায়, অনেক হত্যা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। একটি মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় অনেক বিষয় জড়িত থাকে। সেগুলো সঠিক সময়ে প্রতিপালিত না হলে বিচারপ্রক্রিয়াও পেছাতে থাকে।
তেমনি একটি বিষয় হলো মৃতদেহের ময়নাতদন্ত। ১০ দিনের মধ্যে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ৩০টি ময়নাতদন্ত ছয় মাসেও সম্পন্ন হয়নি বা প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। ফলে সেই মামলাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আদালতকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়ায় শুধু বিচারপ্রক্রিয়াই পিছিয়ে যায় না, গ্রেপ্তার করা অনেক আসামির জামিন পর্যন্ত আটকে যায়। অথচ জামিন পাওয়ার অধিকার দেশের প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে। অভিযোগ আছে, এই ৩০টি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছয় মাসে পাওয়া না গেলেও ঘুষ দিলে কয়েক দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
শুধু মাধবপুর সদর হাসপাতালই নয়, এমন অভিযোগ সারা দেশের অনেক হাসপাতালের বিরুদ্ধেই রয়েছে। সময়মতো প্রতিবেদন না দেওয়ার পাশাপাশি ঘুষ নিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগও কম নয়। অভিযোগ আছে, মর্গ থেকে লাশ ফেরত পেতেও ঘুষ দিতে হয়। পত্রপত্রিকায় এসংক্রান্ত বহু প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। জানা যায়, মাধবপুরে বহরা গ্রাম থেকে ২৩ জুন পুলিশ একটি মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ হেলেনা বেগম নামের এক গৃহবধূকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর পক্ষে আইনজীবী জামিন চাইতে গেলে আদালত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মাধবপুর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। হাসপাতাল থেকে প্রতিবেদন না পেয়ে ওসি আদালতে তাগিদপত্রের অনুলিপি দাখিল করেন। জজ এবার সিভিল সার্জনকে আদেশ দেন। গত ৭ নভেম্বর আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে সেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। জানা যায়, আদালতের আদেশের পরও আসামির পরিবারের লোকজনকে এই প্রতিবেদনের জন্য অনেক ছোটাছুটি করতে হয়েছে। এভাবে সবার পক্ষে প্রতিবেদনের পেছনে ছোটার বা অন্য কোনোভাবে পাওয়ার মতো চেষ্টা করারও সামর্থ্য থাকে না। একজন আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, আদালত থেকে তাগাদা দেওয়ার পরও তাঁর এক মক্কেলের প্রতিবেদন এক বছরেও পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, যাদের টাকা এবং ভালো লবিং আছে, তারা সহজেই এই প্রতিবেদন পেয়ে যায়। এটা কি কোনো হাসপাতালের ময়নাতদন্তের চিত্র হতে পারে?
আমরা চাই হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে কেন এভাবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আটকে রয়েছে, কেন কিছু প্রতিবেদন কয়েক দিনে হচ্ছে, আবার কোনোটি কেন বছর পেরিয়ে যাচ্ছে—তা তদন্ত করা হোক। টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয়টি সত্য হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।