মাছে-ভাতে বাঙালি বলে একদা আমাদের পরিচিতি ছিল। দুর্মূল্যের বাজারে সেই মাছ-ভাতের জায়গা দখল করেছে ডাল-ভাত। যাদের মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য নেই, তারা ডাল-ভাত ও সামান্য সবজি দিয়েই চাহিদা মেটায়। দাম বাড়ার এই প্রবণতা কেবল ডাল-চালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বেড়েছে মাছ, মাংস, চিনি, ভোজ্যতেল ও সবজির দামও। গত বছর এই মৌসুমে সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছিল, দামও সাধারণ মানুষের আয়ত্তে ছিল। এবার ইলিশের সরবরাহ কম, দাম বেশি। ফলে অন্যান্য মাছের ওপরও এর প্রভাব পড়ছে। সেই সঙ্গে সোনালিকা (কক) মুরগির দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বাড়লে সীমিত আয়ের মানুষের কপালে ভাঁজ পড়াটাই স্বাভাবিক। দাম বেড়েছে সবজিরও। পেঁপে, কচুমুখী ও ঢ্যাঁড়স ছাড়া কোনো সবজি ৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া যায় না। এক কেজি বরবটি ৮০ টাকা এবং এক কেজি সিম ১২০ টাকায় বিক্রি হলে কজনের পক্ষে তা কেনা সম্ভব?
করোনাকালে মানুষের আয়রোজগার অনেক কমে গেছে। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। ফলে অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় কম শাকসবজি কিনছেন। মাছ-মাংসের পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছেন। গত বছর মহামারির মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছিল ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ বছর বাজারের যে গতিবিধি, ধারণা করা যায়, জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে। সে ক্ষেত্রে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ যাবে কোথায়?
ভারতসহ অনেক দেশেই নানা রকম রেশনিং বা স্বল্প দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সীমিত আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আমাদের এখানে সে রকম কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকার রেশনিং চালু করতে না পারুক, অন্তত বাজার তদারকি ব্যবস্থাটি জোরদার করতে পারে। তাতে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর পণ্যমূল্যের বোঝা কিছুটা হলেও কমবে।