সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। এ সময়ে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৫ হাজার ১৯২ জন এবং মারা গেছে ২৪৭ জন। ক্রমেই বেড়ে চলেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সাম্প্রতিক নানা সমীক্ষায় দেখা গেছে, আগে করোনা শহরে বেশি ছড়ালেও এখন তা গ্রামগঞ্জে বেশি ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি শহরের হাসপাতালগুলোতে যত রোগী আসছে তার ৭০ শতাংশেরও বেশি আসছে গ্রামাঞ্চল থেকে। মৃতের সংখ্যাও এখন গ্রামেই বেশি। অন্যদিকে গ্রামের এসব রোগীর বেশির ভাগই টিকা নেয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান টিকাদান কার্যক্রম আরো জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শুধু জেলা-উপজেলা সদরে নয়, ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত টিকা প্রদান কার্যক্রম দ্রুততর করার নির্দেশ দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আশা করছে, আগামী ৭ আগস্ট থেকে টিকাদান কর্মসূচি গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে এবং টিকা প্রদানের গতি অনেক বাড়বে। বর্তমানে দৈনিক দুই লাখের মতো মানুষকে টিকা দেওয়া হলেও ৭ আগস্টের পর দৈনিক সাড়ে আট লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
কঠোর লকডাউন দিয়েও মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মানুষের সচেতনতা যেমন কম, তেমনি স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে রয়েছে প্রবল অনীহা। অপ্রয়োজনেও অনেকে ঘর থেকে বের হয়ে আসছে। সোমবার পাঁচ শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, প্রায় সাড়ে চার শ গাড়িকে জরিমানা করা হয়েছে। এটি প্রায় প্রতিদিনের চিত্র। তার পরও মানুষ ক্রমে বেশি করে রাস্তায় নামছে। অন্যদিকে শিল্প-কারখানা, দোকানপাট বন্ধ থাকায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও গতি হারিয়েছে।
নিম্ন আয়ের বহু মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। এই অবস্থায় লকডাউন খুব একটা দীর্ঘায়িত করা যাবে না। অর্থনীতিবিদরাও মনে করেন, লকডাউন দীর্ঘায়িত করা ঠিকও হবে না। শিল্পোদ্যোক্তারা দ্রুত কলকারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। এমন প্রেক্ষাপটে দ্রুততম সময়ে সম্ভাব্য সর্বাধিক মানুষকে টিকা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসাটাই হবে করোনা প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। কিছুদিন আগে টিকার সাময়িক সংকট তৈরি হলেও এখন পর্যাপ্ত টিকা হাতে আছে।
আরো টিকা আসছে। এখন পর্যন্ত সাত কোটি একক ডোজের টিকাসহ ২১ কোটি ডোজ টিকার ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এতে ১৪ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে, যা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত। এখন প্রয়োজন দ্রুত টিকা দেওয়া। জনবলের সংকট কাটাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরো চার হাজার চিকিৎসক ও চার হাজার নার্স নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে।
এই প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে। ফ্রন্টলাইনে থাকা ব্যক্তিদের প্রায় সবাইকে টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁদের পরিবারের সদস্যরা টিকা না পেলে তাঁরাও ঝুঁকিতে থাকবেন। তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও দ্রুত টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী টিকা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ গতি আনার চেষ্টা করতে হবে। আমরা আশা করি, মানুষ দ্রুততম সময়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে পাবে।