করোনাভাইরাস নিয়ে দুনিয়াব্যাপী উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কোনো শেষ নেই। টিকা উদ্ভাবিত হলেও এখন পর্যন্ত তা বেশির ভাগ দেশেরই নাগালের বাইরে রয়েছে। বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকার জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে। বাংলাদেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সেই টিকার জন্য। কিন্তু গত রবিবার রাতে হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যম খবর দেয়, ভারত সরকার নিজ দেশে টিকার চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত টিকা রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর অর্থ বাংলাদেশ শিগগিরই এই টিকা পাবে না। এমন খবরে বাংলাদেশের টিকাপ্রত্যাশী মানুষের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার দিনভর চলে ব্যাপক গুঞ্জন। তাহলে কী হবে? দিনের শেষভাগে জানা গেল খবরটি সঠিক নয়। ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, বাংলাদেশ সময়মতোই টিকা পাবে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বলেছে, আগের ঘোষিত সময়ে অর্থাৎ চলতি মাসের শেষ দিকে অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই টিকা আসবে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এই টিকা ভারতে উৎপাদন করবে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। বেক্সিমকোর মাধ্যমে এই টিকার মোট তিন কোটি ডোজ আমদানির বিষয়ে একটি চুক্তিও হয়েছে। সম্প্রতি ভারত সরকার তাদের দেশে জরুরি ভিত্তিতে এই টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশও এই টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে এবং জরুরি ভিত্তিতে টিকা আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এমন পরিস্থিতিতে টিকার ভারতীয় উৎপাদক সেরাম ইনস্টিটিউটও জানিয়েছে, টিকা রপ্তানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন আনার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, সিএমএইচডি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভ্যাকসিনসংশ্লিষ্ট অন্য শাখাগুলোও প্রস্তুত আছে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সোমবার বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশের টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। ভারতে উৎপাদিত টিকা বাংলাদেশ প্রথম থেকেই পাবে। জানা গেছে, ভারত বর্তমানে বাণিজ্যিক রপ্তানি বন্ধ রাখবে। বাংলাদেশের সঙ্গে করা চুক্তিটি তার আওতায় আসবে না। এদিকে টিকা কেনার জন্য সরকার আরো প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ফলে এই প্রকল্পের মোট খরচ দাঁড়াবে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি।
করোনা মহামারির এই সময়ে টিকা পাওয়া নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে যেকোনো দুঃসংবাদ মানুষকে অনেক বেশি আহত করবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ছয় মাসের মধ্যে আমরা সাত কোটি ডোজ টিকা পাব; কিন্তু প্রয়োজন তার চেয়েও অনেক বেশি। তা ছাড়া প্রতিশ্রুত টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যাও হতে পারে। তাই অন্যান্য উৎস থেকেও টিকা সংগ্রহের ওপর আমাদের আরো বেশি জোর দিতে হবে। পাশাপাশি টিকা হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন ব্যাপক ভিত্তিতে এবং দ্রুততার সঙ্গে তা প্রয়োগ করা যায়, তার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখতে হবে।