দেশে সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামোর বিস্তৃতি বাড়লেও অনেক এলাকায় এখনো নৌ চলাচল ও ঘাট পারাপারই যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। নদী ও খাল–বিলের এ দেশে সেটি হওয়াটাই স্বাভাবিক। ঘাটগুলো ইজারা দিয়েও সরকারের রাজস্ব আয় হয়। তবে সন্দ্বীপ থেকে হাতিয়া কিংবা বাঁশখালী থেকে মহেশখালী পর্যন্ত ঘাটগুলোর তদারকি দেখলে খুবই হতাশ হতে হয়।
মানুষের ভোগান্তির সীমা নেই বেশির ভাগ ঘাটেই। বাঁশখালীর একটি ইউনিয়নে ঘাটের অব্যবস্থাপনার কারণে ভুক্তভোগী হচ্ছে সেখানকার কয়েক শ শিক্ষার্থী। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে স্কুল–কলেজশিক্ষার্থীদের ঘাট পাড়ি দিতে হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলা ও চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নকে ভাগ করেছে দেড় শ ফুট প্রস্থের একটি খাল। ছনুয়া খাল নামেই সেটি পরিচিত। ওই এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই আবার রাজাখালী এলাকার নদীর পাশে।
সেখানে আছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চবিদ্যালয়, একটি কলেজ ও একটি মাদ্রাসা। সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ছনুয়া এলাকার, যা সংখ্যায় প্রায় পাঁচ শ। ফলে স্কুল–কলেজ বা মাদ্রাসায় যেতে প্রতিদিন তাদের খাল পার হতে হয়।
রাজাখালী ও ছনুয়া এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য একটি ঘাট আছে। ঘাটটি ইজারা দিয়ে থাকে ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদ। ছোট ডিঙিনৌকা করে সেই ঘাটে মানুষ পারাপার করা হয়। ঘাট পার হতে প্রতিজনকে দিতে হয় পাঁচ টাকা।
পুরো বছরের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় ঘাটটি ইজারা নিলেও ইজারাদার ঘাট ব্যবস্থাপনায় নিজের অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। ঘাটে নৌকায় উঠতে–নামতে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। এ ছাড়া নৌকার সংখ্যাও একটি বা দুটি। প্রতিদিন কয়েক শ শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের জন্য যা কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ঘাট ইজারা দিয়ে টাকা আয় করলেও ঘাটের উন্নয়নে কোনো টাকাই খরচ করে না পরিষদ। শিক্ষার্থীরা প্রায় সময়ই সেখানে ছোটখাটো দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থীর বক্তব্য, ‘প্রতিদিন দুরু দুরু বুকে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করি। ঘাটের নৌকায় উঠতে গিয়ে কখন আবার পড়ে যাই।’
সেতু হোক না হোক, সেটি অনেক দীর্ঘ সময়ের বিষয়। তার আগে ঘাটের সিঁড়ি দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেরামত করা হোক। নৌকার সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে, সেটি নিশ্চিত করা হোক। শিক্ষার্থীদের পারাপারে কোনো ঝুঁকি যেন না থাকে, সেটিই কাম্য।