দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি চলছে। এরই মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ টিকা নিয়েছেন। করোনায় আক্রান্তের হারও অনেক কমেছে। অন্যদিকে টিকা আসায় এবং করোনায় আক্রান্তের হার কমে যাওয়ায় মানুষের চলাফেরা ও সামাজিক মেলামেশা অনেক বেড়ে গেছে। বলা যায়, মানুষ এখন করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের মতোই প্রায় স্বাভাবিক জীবনে চলে গেছে।
এমনকি মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও মানুষের ব্যাপক অনীহা দেখা যাচ্ছে। অথচ এরই মধ্যে দেশে প্রবেশ করেছে যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়া অপেক্ষাকৃত মারাত্মক ধরনের করোনাভাইরাস। এই ধরনগুলো ভাইরাসের আগের ধরনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক এবং মৃত্যুর হার অনেক বেশি। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, মার্চের প্রথম দিকেই বাংলাদেশে আবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেক দেশেই করোনায় আক্রান্তের হার কমে গিয়েছিল। লকডাউন প্রত্যাহার করে পর্যটন, হোটেল, রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়া হয়েছিল। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেসব দেশে আবারও কঠোর লকডাউন চালু করা হয়েছে। তবু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অনেক দেশই যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ যেসব দেশে নতুন ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, সেসব দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক দেশ সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমাদেরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা দরকার। নতুন ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, এমন দেশ থেকে আসা মানুষকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি করোনাভাইরাস পরীক্ষার হার অনেক বাড়াতে হবে।
রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, বিপণিবিতান, গণপরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ জনসমাগমের স্থানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনীহা দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টিকা নিলেও মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। কারণ টিকা নেওয়ার পরও যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন আবার অন্যকেও আক্রান্ত করতে পারেন। তাই যাঁরা টিকা নিয়েছেন এবং যাঁরা নেননি সবাইকেই মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও বারবার হাত ধোয়ার মতো জরুরি স্বাস্থ্যবিধিগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধে প্রশাসনিক যে উদ্যোগগুলো ছিল, সেগুলোও চালু রাখতে হবে।
টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। টিকার জন্য নিবন্ধনের সংখ্যা যেমন দ্রুত বাড়ছে, তেমনি টিকাদান কেন্দ্রগুলোতেও মানুষের ভিড় বাড়ছে। দৈনিক দুই লাখের বেশি মানুষ টিকা নিচ্ছেন। কিন্তু টিকা দেওয়ার হার এখনো তুলনামূলকভাবে কম। আমাদের প্রায় ১০ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে এবং যত দ্রুত তা করা যায় ততই মঙ্গল। এ জন্য টিকাদান কেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি টিকা আমদানির ওপর আরো বেশি জোর দিতে হবে। আমরা চাই না, করোনা সংক্রমণের হার আবারও বেড়ে যাক। তাই সম্ভাব্য সব ধরনের প্রতিরোধব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।