দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে করোনা মহামারি। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুটিরশিল্প, অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা (সিএমএসএমই)। তাদের রক্ষায় সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজও ঘোষণা করেছিল। কিন্তু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা অজুহাত ও কঠিন শর্তের কারণে এই খাতের উদ্যোক্তারা ঋণ পেয়েছেন খুবই কম। আর নারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ প্রায় পাননি বললেই চলে। দ্বিতীয় পর্যায়ের তহবিল থেকে ঋণ বিতরণের চিত্রও প্রায় একই রকম। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৮ শতাংশেরও কম। এই সময়ে ১৭টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই খাতে কোনো ঋণই বিতরণ করেনি। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন অনাগ্রহ দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার জন্য মোটেও ইতিবাচক নয়।
করোনা মহামারির আঘাতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে রীতিমতো বিপর্যয় নেমে এসেছে। সেই অবস্থা থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য উন্নত দেশগুলোতে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশেও ২৮টি প্যাকেজের আওতায় এক লাখ ৩১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার প্রণোদন ঘোষণা করা হয়। এসব প্যাকেজের মধ্যে সিএমএসএমই খাতে রয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং বড় শিল্প ও সেবা খাতে রয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ। বাস্তবে দেখা যায়, বড় শিল্প ও সেবা খাতে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ প্রদানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহী হলেও সিএমএসএমই খাতে ততটা নয়। এই খাতে প্রথম পর্যায়ের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ প্রদানের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুনে, আর দ্বিতীয় পর্যায়ের প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের জুনে।
বর্তমান হারে ঋণ প্রদান করা হলে এই মেয়াদে এক-তৃতীয়াংশ ঋণও বিতরণ করা যাবে না। তাহলে এই খাতের লাখ লাখ উদ্যোক্তাকে রক্ষার যে উদ্দেশ্য থেকে সরকার এই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেই উদ্দেশ্য অর্জন হবে কিভাবে? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে ধরনের তদারকি থাকা দরকার ছিল তার অভাব রয়েছে। ছোট ছোট বহু উদ্যোক্তার কাগজপত্র তৈরিসহ শ্রমসাপেক্ষ ঋণ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলো যেতে চায় না। আবার ব্যাংকগুলো যেসব কাগজপত্র চায়, ছোট অনেক উদ্যোক্তা সেগুলো দিতে পারেন না বলেও তাঁরা ঋণ পান না।
দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও নারী উদ্যোক্তাকে বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী। সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করতে হবে। ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে হবে। প্রয়োজনে জামানতবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন