উত্তরবঙ্গের, বিশেষ করে গাইবান্ধার কৃষকেরা এখন চড়া সুদের সেই ফাঁদে পড়ে ভয়ংকর সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এই জেলায় সাধারণত বোরো মৌসুম শেষে ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকদের চার-পাঁচ মাস কাজ থাকে না। তাঁরা ওই সময় কাজের খোঁজে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যান। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে তাঁরা যেতে পারেননি। তার ওপর তিন দফায় হওয়া বন্যায় ফসল নষ্টের ধকল ছিল। ফলে সংসারের খরচ মেটাতে তাঁরা ঋণনির্ভর হয়েছেন। ঋণের সুদ দিতে না পারায় তা সুদে-আসলে এমন অঙ্কে পৌঁছেছে যে অনেকের জমি ও ঘরবাড়ি বিক্রি করা ছাড়া উপায় থাকছে না।
ভয়ানক খবর হলো, সেখানে মাসিক টাকার ভিত্তিতে ১০ হাজার টাকা নিলে মাসে ১ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়। তার মানে, বার্ষিক সুদের হার দাঁড়ায় ১২০ শতাংশ। এ ছাড়া ‘কারেন্ট’ সুদের ওপর নিলে ১ হাজার টাকায় দিনে ১০০ টাকা সুদ দিতে হয়। ‘হাটরা’য় প্রতি সপ্তাহে হাটে ১ হাজার টাকায় সুদ দিতে হয় ১৬০ টাকা।
কাগজপত্রের ঝামেলা ও হয়রানি এড়াতে এবং তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পেতে কৃষকেরা এ চড়া সুদে ঋণ নেন। যাঁদের হাতে টাকা আছে, তাঁদের অনেকেই সেখানে সুদের ব্যবসা করছেন। বিভিন্ন হাটবাজার ও পাড়া-মহল্লায় ঋণ দেওয়ার নামে অসংখ্য অবৈধ সমিতি গড়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে কেউ আইন মেনে ঋণ দিচ্ছেন না। এ ধরনের মহাজনদের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তবে তার আগে মাথায় রাখতে হবে, মহাজনি সুদের কারবার থেকে গরিব কৃষককে বের করতে হলে তাঁদের চাহিদামতো ঋণ দিতে হবে। এ ছাড়া কার্যকরভাবে বিস্তৃত পরিসরে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।