উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ দেশের অনেক সরকারি হাসপাতালের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। ভবন আছে, বরাদ্দ আছে, কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামও আছে; কিন্তু চিকিৎসা নেই। কারণ গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র রোগীকে যাঁরা চিকিৎসা দেবেন খাতা-কলমে নাম পাওয়া গেলেও বাস্তবে তাঁদের দেখা মেলে না। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই চিকিৎসক অনুমতি না নিয়েই সাত বছরে ধরে অনুপস্থিত।
চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি যেমন সমস্যা, তেমনি আরো একটি বড় সমস্যা হাসপাতালের যন্ত্রপাতি। দেশের অনেক হাসপাতালেই আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। আবার যেসব হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে, সেসব হাসপাতালে নেই প্রয়োজনীয় টেকনিশিয়ান। অনেক হাসপাতালে যন্ত্রপাতি গেলেও তা স্থাপন করা হয়নি। অন্যদিকে অনেক টেকনিশিয়ান বাইরে কাজ করার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় না।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ। হাসপাতালে দুটি এক্স-রে মেশিন রয়েছে। কিন্তু টেকনিশিয়ান না থাকায় তা কোনো কাজেই আসছে না। ২০০৪ সালে টেকনিশিয়ান অন্যত্র বদলি হয়ে যান। এরপর প্রায় ১৮ বছর ধরে এক্স-রে কক্ষে তালা ঝুলছে।
গত বছর সংযুক্ত ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন এক দিনের জন্যও কাজে আসেনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি লিখেও সুফল আসেনি। এতে বাধ্য হয়েই রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে বেশি টাকা খরচ করে এক্স-রে করতে হচ্ছে।
হাসপাতালে সেবার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেকের। নিয়মিত ওয়ার্ডগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না, খাবারের মানও সন্তোষজনক নয়, দু-একটি ছাড়া প্রয়োজনীয় অন্য সব ওষুধ চড়া দামে ফার্মেসি থেকে কিনতে হয়।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার বেশির ভাগই বাস করে গ্রামাঞ্চলে এবং তাদের অধিকাংশই দরিদ্র। অসুখবিসুখে তাদের অনেকের পক্ষেই শহরে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই শুধু লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নয়, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে নিশ্চিত করা হোক সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা।