বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ডায়াবেটিক রোগী রয়েছেন যে ১০টি দেশে তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বিশ্বে বর্তমানে ডায়াবেটিক রোগী রয়েছেন প্রায় ৫৪ কোটি। এর মধ্যে বাংলাদেশেই আছেন এক কোটি ৮০ লাখ। তার পরও প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, তাঁদের ৯২ শতাংশই রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। ফলে ডায়াবেটিসের কারণেই তাঁরা বিভিন্ন সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং এসব রোগে তাঁদের মৃত্যুর হারও বেশি। বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের এমন করুণ চিত্রের মধ্যেই সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানুন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।প্রতিপাদ্যটি বাংলাদেশের জন্য খুবই উপযোগী। কারণ এখানে বেশির ভাগ মানুষই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বা বিপদ সম্পর্কে সচেতন নয়, চিকিৎসা ও নিয়ম-কানুন মানার ব্যাপারে উদাসীন এবং কিভাবে ডায়াবেটিস সত্ত্বেও সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়, তা জানে না।ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। আমাদের শরীরে প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন উৎপন্ন করে।এই ইনসুলিন রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে। কারো শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে বা কমে গেলে কিংবা শরীর যদি ইনসুলিন ব্যবহার করতে না পারে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। দেখা দেয় ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো। নিয়মিত চিকিৎসা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে ডায়াবেটিক রোগীরাও দীর্ঘ জীবন পেতে পারেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে বেশির ভাগ রোগীই তা করেন না এবং রোগটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।আর রোগটি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন একজন ডায়াবেটিক রোগী দ্রুত অন্যান্য অসুখে আক্রান্ত হন। এসব অসুখ বা স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনির সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ ইত্যাদি। তখন রোগীর চিকিৎসার খরচ বেড়ে যায় এবং অনেকের পক্ষেই সেই খরচ বহন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ৫০ শতাংশ হৃদরোগের কারণ ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগে মৃত্যুর ৮০ শতাংশই হয় ডায়াবেটিসের কারণে। অন্ধত্বেরও অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিক রোগীর ২৯ শতাংশই রেটিনোপ্যাথিতে ভুগছে। ডায়াবেটিসের কারণে প্রজননক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে।ডায়াবেটিস ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তিত ধরন অনেকাংশে দায়ী। মানুষের হাঁটাচলা বা শারীরিক পরিশ্রম কমে গেছে। ফাস্ট ফুডের ব্যবহার বেড়েছে। ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে হলে এগুলো বদলাতে হবে।আবার রোগ গুরুতর হওয়ার আগ পর্যন্ত অনেকেই জানে না যে সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে। তাই ডায়াবেটিস সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি মানুষ যাতে খুব সহজে ডায়াবেটিস নির্ণয়ের পরীক্ষা করাতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসার সুযোগ আরো বাড়াতে হবে। ওষুধ, ইনসুলিন আরো সহজলভ্য করতে হবে।