চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন স্বল্প আয়ের মানুষ; বিশেষ করে করোনাকালে যাঁরা কাজ হারিয়েছেন, যাঁদের আয় কমে গেছে, তাঁদের জন্য বাজারের এই ঊর্ধ্বগতি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া আর কিছুই নয়।
জানা যায়, গত এক সপ্তাহে চালের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। ঈদের আগেও এক দফা বেড়েছিল। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ৫০ টাকা কেজির নিচে মোটা চালও পাওয়া যায় না। ঈদুল আজহার আগেও মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৭ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হতো। অন্যান্য চালের দামও আনুপাতিক হারে বেড়েছে। মৌসুমের মাঝামাঝি এসে চালের এই দাম বাড়া মোটেও স্বাভাবিক নয়। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এ বছর বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় সত্ত্বেও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তারপরও এভাবে দাম বাড়ার কারণ কী?
এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী, চালকলের মালিক ও মজুতদারদের কারসাজি আছে; বিশেষ করে যাঁরা অসৎভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন, তাঁরা চাল কিনে মজুত করাকেই অধিক লাভজনক ভাবছেন।
কেবল চাল নয়, বেড়েছে ডিম, মুরগি, চিনি এবং ভোজ্যতেলের দামও। কঠোর লকডাউনের অজুহাতে খুচরা ব্যবসায়ীরা সবজির দামও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ঈদুল আজহার পরে মুরগির দাম কিছুটা কমলেও আবার বাড়তির দিকে। মুরগির ডিম ১১০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে। দু-তিন দিন ধরে দাম বাড়তি। ব্রয়লার মুরগি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি, সোনালিকা (কক) ২৪০ টাকা কেজি আর লেয়ার মুরগি ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের চেয়ে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১৫ টাকা বেড়েছে, আর সোনালিকা ১০ টাকা কমে ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালের দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। দুভাবে সেটি হতে পারে। প্রথমত, বিদেশ থেকে চাল আমদানি করে। চাল আমদানির বিষয়ে সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমদানি শুল্ক ৬৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। গত বছর আমদানি শুল্ক কমালেও আমদানির অনুমতি মিলেছে তিন মাস পর। এ সময়ে মজুতদারেরা ফাউ কামিয়ে নিয়েছেন। এবারও যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সরকারি–বেসরকারি উভয় খাতে আমদানি হলে সুস্থ প্রতিযোগিতা হবে। অন্যথায় বাড়তি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা থাকবে।
আমন মৌসুম আসতে এখনো অনেক দেরি। সে ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে চাল আমদানি করে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। সরকার চাল আমদানির উদ্যোগ নিলে ব্যবসায়ী-মজুতদারেরা বাজারে বেশি পরিমাণে চাল ছেড়ে দেবেন বলে আশা করা যায়।
আমরা চালে স্বনির্ভর, এটি দেখানোর জন্য আমদানি বন্ধ করে দিয়ে চালকলের মালিক ও মজুতদারদের মুনাফা বাড়ানোর সুযোগ করে দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। চালের দাম বাড়লে লাভের গুড় পুরোটাই খেয়ে ফেলেন চালকলের মালিক ও মজুতদারেরা। তাই চালের দাম বাড়িয়ে কৃষকদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা না করে তাঁদের উৎপাদন ব্যয় কমানোর ওপরই জোর দিতে হবে।