করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যে বিষণ্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার থেকে বেরিয়ে আসার আশাব্যঞ্জক লক্ষণ দেখা দিয়েছে। করোনার নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে এ বছরই ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ সে কথাই বলেছে। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। আর সেটা সম্ভব হবে রপ্তানি ও প্রবাস আয়ের (রেমিট্যান্স) সফলতায়।
জাতিসংঘের বিশ্ব অর্থনীতি বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক সিচুয়েশন অ্যান্ড প্রসপেক্টাস ২০২১’-এ উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশ। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি কমে গেছে; জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ০.৫ শতাংশ, ২০১৯ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮.৪ শতাংশ।
আশা করা যায়, বাণিজ্য ও প্রবাস আয়ের ওপর ভর করে চলতি বছরের দ্বিতীয় ভাগে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে অর্থবছরের হিসাবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির যে হিসাব দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৪.৩ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৫.১ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৭.৬ শতাংশ।
২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশের অর্থনীতিও বিপাকে পড়েছিল। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ ছিল।
ওই বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি আবার সচল হতে শুরু করে। প্রবাসীরা বিপুল অঙ্কের টাকা (রেমিট্যান্স) পাঠাচ্ছেন, পোশাকনির্ভর রপ্তানিতেও সাফল্য আসছে। জাতিসংঘ আশা করে, এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার জোরালোভাবে শুরু হবে। প্রসঙ্গত, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনায় দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১৯ সালে কমে হয় ৩.১ শতাংশ, ২০২০ সালে হয় মাইনাস ৮.৬ শতাংশ এবং ২০২১ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৯ শতাংশ।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বাণিজ্যিক দিক থেকে বাইরের দেশগুলোর ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ২০২১ সালে এসব দেশ ঘুরে দাঁড়াবে এবং প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। এ জন্য এই অঞ্চলের দেশগুলোকে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। সেটা আনা হলে দ্রুত স্থিতিশীলতায় ফেরা সম্ভব হবে।
মোট কথা, আমাদের জন্য আশার আলো দেখা দিয়েছে। আশার আলো যেসব ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রবণতার ভিত্তিতে দেখা হয়েছে সরকারকে সেসব ক্ষেত্রের ওপর তীক্ষ নজর রাখতে হবে।
ক্ষেত্রগুলোকে প্রয়োজনীয় সব নীতিগত ও উপকরণগত সহযোগিতা জোগাতে হবে। আমরাও আশা রাখতে চাই যে আমাদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের অবসান ঘটবে।