দেশের পুঁজিবাজারকে বিনিয়োগকারীরা কী অবস্থায় দেখতে চান তা বর্ণনা করতে দুটি শব্দই যথেষ্ট স্টেবল ও ভাইব্র্যান্ট। অর্থাৎ স্থিতিশীলতার পাশাপাশি গতিশীলতাও থাকবে পুঁজিবাজারে। কিন্তু সেটা কী করে সম্ভব? আমরা সব সময় বলে আসছি দেশের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে আস্থার সংকট। এই একটি সমস্যা কাটিয়ে ওঠা গেলে বাজারের বেশির ভাগ সমস্যা দূর হয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন। এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, বাজারকে স্থিতিশীল রেখে আস্থার সংকট কাটিয়ে ওঠা।
তার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন প্রডাক্ট বাজারে আনার চেষ্টা করছে বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। দেশি ভালো প্রাইভেট কম্পানির পাশাপাশি মাল্টিন্যাশনাল কম্পানির শেয়ার বাজারে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বন্ড মার্কেট শক্তিশালী হচ্ছে। মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করা হচ্ছে। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন এরই মধ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজারকে এগিয়ে নিতে হলে লিস্টেড কম্পানিগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা বিশেষ জরুরি। সম্প্রতি বীমা কম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা মানতে সময় বেঁধে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এ খাতের তালিকাভুক্ত কম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বেড়েছে। আগামী এপ্রিল থেকে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন নিয়মে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর শেয়ার বিলির নিয়ম করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নতুন নিয়মে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বণ্টন হবে আনুপাতিক হারে। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন নিয়মের সুফল পাবে পুঁজিবাজার।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের একটি দিক হচ্ছে, এখানে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ হয় কম। গুজবনির্ভর বাজারে গ্যাম্বলিংয়ের সুযোগ থাকায় পুঁজিবাজার সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। অথচ আমাদের শেয়ারবাজার ভালো হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন ব্যাংকে যথেষ্ট তারল্য আছে, আমানতের সুদহার কমে যাওয়ার পাশাপাশি অপ্রদর্শিত আয় যখন বিনিয়োগ হচ্ছে, তখন শেয়ারবাজার ইতিবাচকভাবে গতিশীল হবে। অন্যদিকে সার্ভেইল্যান্স ও মার্কেট ইন্টেলিজেন্স বিভাগ সব সময় পুঁজিবাজারকে নজরদারিতে রাখছে। ফলে আস্থার সংকট শিগগিরই কেটে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু তার পরও পুরনো ভয় উঁকি দিচ্ছে অনেকের মনে। বাজারে কারসাজিকারীরা আবার সক্রিয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামে-বেনামে নানা পেজ খুলে ‘গুজব’ ছড়িয়ে মন্দ হিসেবে পরিচিত ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ারের দাম তারা কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে চলেছে বলে খবরে প্রকাশ। এ অবস্থায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দায়িত্ব হচ্ছে, গুজবে প্রভাবিত না হয়ে দক্ষতার সঙ্গে পুঁজিবাজারে মৌল ভিত্তিসম্পন্ন শেয়ারে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে।
একটি টেকসই পুঁজিবাজার দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট কাটতে শুরু করেছে। বাজারে গতি ফিরছে। এ অবস্থায় বিএসইসির নজরদারি ও বাজারের বর্তমান প্রবৃদ্ধি টেকসই করবে বলে আমরা মনে করি।