করোনা মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতির বিপর্যস্ত অবস্থা। ১৯৩০ সালের মহামন্দার পর বিশ্ব আবার সবচেয়ে বড় মন্দায় পড়েছে ২০২০ সালে। মন্দার আঘাত লেগেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পসহ অনেক শিল্পই কঠিন অবস্থা মোকাবেলা করছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক কারখানা। ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই হয়েছে।
অসংখ্য মানুষের রুটি-রুজিতে টান পড়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে উৎপাদনশীলতা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের এক লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ, আগের নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো ও ঋণের সুদ সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্তগুলো ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী ও যথাযথ পদক্ষেপ। এসব নীতি সহায়তার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতি কাটিয়ে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন; কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। অনেক দেশ আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় তার প্রভাব পড়ছে আমাদের রপ্তানি খাতে। অনেক ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করা হচ্ছে। ফলে আবারও নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এটা ঠিক, করোনা মহামারির মধ্যেও অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা যথেষ্ট ভালো। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ বেড়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে ২০.৫০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পণ্য রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ৫৭৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ০.৯৩ শতাংশ বেশি।
মন্দার মধ্যেও ভালো অবস্থায় আছে দেশের পুঁজিবাজার। এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ক্যাপিটালের সাম্প্রতিক সময়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে পুঁজিবাজারের উত্থানে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। সংস্থাটির পূর্বাভাস ঠিক থাকলে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে এক হাজার ৮৮৮ ডলার, ভারতের এক হাজার ৮৭৭ ডলার। এ ছাড়া এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ এবং এশিয়ার মধ্যে চতুর্থ হতে চলেছে বাংলাদেশ। মন্দার মধ্যেও এমন পূর্বাভাস আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এ পর্যন্ত মোট এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে; কিন্তু বিতরণে কিছু সীমাবদ্ধতা দেখা গেছে। তাই প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা যাদের পাওয়ার কথা, তাদের কাছে দ্রুত তা পৌঁছাতে হবে। যারা বেকার হয়ে পড়ছে, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা মনে করছেন, ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়ানোসহ কমপক্ষে আরো এক বছর নীতি সহায়তা দিয়ে যেতে হবে। স্বল্প মেয়াদে হলেও প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন