অধিক হারে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশের উন্নয়ন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করার উদ্দেশ্যে সরকার দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে বন বিভাগ। বর্তমান সময়ে সরকারের পরিচালিত সফল কর্মসূচিগুলোর মধ্যে এটি একটি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই কর্মসূচি নিয়েও অনিয়ম-দুর্নীতির অনেক অভিযোগ উঠছে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অধীনে গাছ নিলামে বিক্রির দুই বছর পার হয়ে গেলেও উপকারভোগীদের অনেককেই এখনো টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। উপরন্তু উপকারভোগীদের অভিযোগ, টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে নানা অজুহাতে তাদের কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা করে নিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
শুধু টাঙ্গাইলের ঘাটাইল নয়, উপকারভোগীরা বঞ্চিত হওয়ার অনেক অভিযোগ আগেও উঠেছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ঘাটাইলে বন বিভাগের ঝড়কা বিটের অধীনে মাকড়াই, কুমারপাড়া ও মালেঙ্গা মৌজায় সামাজিক বনায়নের প্লট রয়েছে ১০১টি।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে এসব প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দপ্রাপ্তরা গাছ লাগানো থেকে শুরু করে ১০ বছর ধরে পরিচর্যা ও দেখভাল করেছেন। এরপর বন বিভাগ নিলামের মাধ্যমে এসব গাছ বিক্রি করে। উপকারভোগীরা এই অর্থের ৪৫ শতাংশ পাওয়ার কথা।অভিযোগ রয়েছে, সেই অর্থ প্রদানে নানা ধরনের টালবাহানা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত টাকা পেয়েছেন মাত্র ৩০ থেকে ৩২ জন। যাঁরা টাকা পেয়েছেন, তাঁদেরও কেউ কেউ জানিয়েছেন যে টাকা পাওয়ার জন্য বন কর্মকর্তাকে অর্থ দিতে হয়েছে।আবার অনেকেই অভিযোগ করেছেন, প্লটের পরিমাপ, গাছের চারা ক্রয়, পরিচর্যা ও ছাঁটাই এবং ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠানোর কাগজপত্র ঠিক করার জন্য বন কর্মকর্তারা একেকজনের কাছ থেকে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা করে নিয়েছেন। জানা যায়, গাছ বিক্রি থেকে একেকজন উপকারভোগীর পাওনা হয়েছে দুই লাখ টাকার বেশি।পুরো টাকা পরিশোধ করা হয় না বলেও অভিযোগ আছে। এরই মধ্যে প্লট বরাদ্দপ্রাপ্ত উপকারভোগীদের কারো কারো মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের নমিনিদেরও বয়স হয়েছে। কেউ কেউ বয়সের কারণে প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। টাকার জন্য ঘুরে ঘুরে তাঁরাও ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে অর্থাভাবে খাওয়া-পরার কষ্ট করছেন। তাঁদের পাওনা অর্থ এত দিনেও পরিশোধ করা হচ্ছে না কেন?
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উদ্যোগ। এমন একটি কর্মসূচিতে কোনো ধরনের দুর্নীতি বা অনিয়ম কাম্য নয়।
আমরা মনে করি, ঘাটাইলে বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো দ্রুত তদন্ত করা হবে এবং অভিযোগ সত্য হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি দ্রুত উপকারভোগীদের প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করা হবে, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।