সিদ্ধান্তটি ছিল সুবিবেচনাপ্রসূত এবং প্রয়োজনীয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে, তাকে বলা যায় ‘হিতে বিপরীত’। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আরমানিটোলা খেলার মাঠ এখন এক জনাকীর্ণ কাঁচাবাজারে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক মানুষ মাছ–মাংস, শাকসবজি ইত্যাদির সঙ্গে শরীরে করোনাভাইরাস বহন করে ঘরে ফিরছেন না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ, কাঁচাবাজারটিতে প্রচুর মানুষের ভিড় হচ্ছে। তাঁরা শারীরিক দূরত্ব মানছেন না, অনেকেই মাস্কও পরছেন না। ফলে আরমানিটোলা খেলার মাঠ এখন করোনা সংক্রমণ বিস্তারের এক ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
অথচ এসব এড়ানোর উদ্দেশ্যেই পুরান ঢাকার নয়াবাজারের কাঁচাবাজারটিকে সরকারি নির্দেশে আরমানিটোলা খেলার মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছে। কারণ, নয়াবাজারের কাঁচাবাজারে প্রচুর মানুষের ভিড় হয়, কিন্তু জায়গাটি অপরিসর বলে দোকানগুলো বসে গায়ে গায়ে ঘনবদ্ধ হয়ে; ক্রেতাদের শারীরিক সংস্পর্শ এড়ানো সম্ভব হয় না। সে তুলনায় আরমানিটোলার মাঠটি বেশি সুপরিসর। সেখানে দোকানগুলো দূরে দূরে বসতে পারবে, ক্রেতারা কেনাকাটা ও চলাফেরা সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারবেন—এসব ভেবেই কাঁচাবাজারটি স্থানান্তর করা হয়েছে আরমানিটোলা খেলার মাঠে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ওই সব ভাবনাই বৃথা গেছে। গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা সম্প্রতি আরমানিটোলা খেলার মাঠের কাঁচাবাজারটিতে সরেজমিনে ঘুরে এসে লিখেছেন, সেখানে একটি দোকান থেকে অন্যটির মধ্যে যে দূরত্ব বজায় রেখে বাজারটি শুরু করা হয়েছিল, এখন আর সেই দূরত্ব বজায় নেই। কারণ, সেখানে প্রতিনিয়ত দোকানের সংখ্যা বাড়ছে এবং দোকানি ও ক্রেতাদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। অনেকেই মাস্ক পরছেন না। ভিড় বেশি হলে এবং দোকানগুলো ঘনবদ্ধভাবে বসলে লোকজনের পারস্পরিক শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকা সম্ভব নয়—এটা সাধারণ জ্ঞানেই বোধগম্য। কিন্তু যাঁরা ওই কাঁচাবাজারটিতে দোকান বসাচ্ছেন এবং যাঁরা কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে এ সচেতনতা কম, অথবা তাঁরা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিটাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছেন না। কিন্তু এটা খুবই ভুল। কারণ, সেখানে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি সত্যিই খুব বেশি।