শুধু সামান্য সচেতনতার অভাবে প্রতিবছর বিভিন্ন রোগে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। তেমনি একটি মৃত্যুর কারণ নিপাহ ভাইরাস। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে রোগীর এনসেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহ দেখা দেয়। এতে মৃত্যুর হার অনেক বেশি।
বাংলাদেশের গত দুই দশকের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এই রোগে মৃত্যুর হার ৭১ শতাংশ অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। যারা বেচে যায় তারাও স্মৃতিনাশসহ দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভুগতে পারে। অথচ সামান্য সচেতনতাই আমাদের এই রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। আর তা হলো কাঁচা খেজুরের রস পান না করা।
বাংলাদেশে বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরেই নিপাহ ভাইরাসের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল ২০০৪ সালে ফরিদপুর জেলায়।
ওই বছর সেখানে ৩৫ জন আক্রান্ত হয়েছিল এবং মারা গিয়েছিল ২৭ জন। এই ভাইরাসটির বাহক এক ধরনের বাদুড়। এর মুখের লালা কিংবা প্রস্রাব-পায়খানার সঙ্গে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
বাদুড়ে খাওয়া ফলমূল খেলেও ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মূলত খেজুরের রস থেকেই এই ভাইরাসটি ছড়ায়।
খেজুরগাছে রস নিঃসরণের জন্য যে অংশটি কাটা হয় বাদুড় সাধারণত সেই অংশটি চেটে রস খায়। সেখানে বাদুড়ের লালা লেগে যায়। পরে রসের সঙ্গে তা কলসিতে গিয়ে জমা হয়।
কাঁচা রস খেলে ভাইরাসটি রসের সঙ্গে মানবদেহে চলে যায়। কিন্তু ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় রস গরম করে খেলে কিংবা গুড় বানিয়ে খেলে ভাইরাস নষ্ট হয়ে যায়। সম্প্রতি রাজশাহীতে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
তাঁরও কাঁচা খেজুরের রস পানের ইতিহাস ছিল। নিপাহ ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—মাথা ব্যথা, খিঁচুনি, গা ব্যথা, ঘাড় ও পিঠ শক্ত হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, গলা ব্যথা ইত্যাদি। এসব লক্ষণ দেখলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।