পলিমাটির বাংলাদেশে নদীভাঙন অতীতেও ছিল, এখনো আছে। কিন্তু অতীতের তুলনায় ভাঙনের হার যেমন বেড়েছে, তেমনি গতি-প্রকৃতিও অনেক বদলেছে। জানা যায়, অতীতে কোনো কোনো বছর সেপ্টেম্বর মাসেও বন্যার উপদ্রব হতো, নদীতে প্রবল স্রোত হতো এবং নদীভাঙন দেখা যেত। অক্টোবর পেরিয়ে এখন নভেম্বর চলে এসেছে।
এখনো পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরীসহ সংযুক্ত আরো কিছু নদীতে প্রবল স্রোত রয়েছে এবং প্রতিদিন নদীভাঙনে ঘরবাড়ি, রাস্তা, ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ধলেশ্বরী নদীর অব্যাহত ভাঙনে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় কালভার্টসহ প্রায় এক হাজার ৫০০ ফুট সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বিপাকে পড়েছে ১৫টি গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ। ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙনে বেশ কিছু বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। একই অবস্থা পদ্মার রাজবাড়ী অংশেও। রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চর বেনিনগর, মহাদেবপুর, কালীতলা এলাকায় পাঁচ শতাধিক বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় এবার কয়েক দফা বন্যা হয়েছে। কোনো কোনো এলাকা পাঁচ দফা বন্যার পানিতে ডুবেছে। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বৃহত্তর সিলেট ও হাওরাঞ্চলে। সেসব ক্ষতি মোকাবেলা করে মানুষ যখন আমন ধান ও শাক-সবজি চাষ করে তা পূরণের চেষ্টা করছিল, তখনই আবার নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপদ। মধ্য অক্টোবরে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা ও সংযুক্ত অন্যান্য নদীতে পানি বাড়তে থাকে। আমন ধান ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পানি যখন কমতে শুরু করেছে তখনই নদীগুলোর দুই পারে ব্যাপক আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাড়িঘর, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট যেমন ভাঙনের শিকার হয়েছে, তেমনি নদীতে বিলীন হয়েছে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি। বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়াই বন্যা ও নদীভাঙনের প্রধান কারণ। তাই নদী খননের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলেও এ দেশে নদীগুলো নিয়মিত খননের মাধ্যমে নাব্য রাখা হতো। বিশাল ড্রেজার বহর ছিল। পাকিস্তান আমলে এই দেশ ড্রেজারশূন্য হয়ে পড়ে এবং নদী খনন বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার চারটি ড্রেজার ক্রয় করে। এরপর দীর্ঘদিন আর কোনো ড্রেজার কেনা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এরই মধ্যে কয়েক ডজন ড্রেজার কেনা হয়েছে। ডেল্টা পরিকল্পনায়ও নদী খননকে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। তার আগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।