জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের ধরনেও পরিবর্তন আসছে। কখনো কখনো এত প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে যে বৃষ্টির পানি সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের সিকিমে প্রবল বৃষ্টির কারণে তিস্তার পানি বাঁধ ভেঙে প্রবল বন্যার সৃষ্টি করেছে। তাতে অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
নিখোঁজ রয়েছে আরো শতাধিক মানুষ। তিস্তার পানি আমাদের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতেও বন্যার সৃষ্টি করেছে। সেই পানি যখন নামছে তখন দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। তিস্তার পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র, যমুনাসহ অন্যান্য নদীতেও ভাঙন দেখা দিয়েছে।
প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে আবারও আকস্মিক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত তিন দিনে উপজেলার বড় নওপাড়া এলাকায় একটি পাকা ভবন, দুটি বসতঘরসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৩০০ মিটারেরও বেশি জায়গা।ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে আরো বেশ কিছু পাকা ভবন ও স্থাপনা। ভাঙন ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। শনিবারও সেখানে দুই হাজারের বেশি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা দেশেই নদ-নদীর ভাঙন তীব্রতা পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙনকবলিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা ও যমুনা অববাহিকা। কয়েক বছরে কুড়িগ্রাম, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। শত শত পরিবার তাদের বাড়িঘর ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মুন্সীগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে হঠাৎ বড় নওপাড়া এলাকায় পদ্মার ভাঙন দেখা দেয়। কয়েক দিনের বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়ার কারণেই এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই এলাকায় বেশ কিছু জায়গা এরই মধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে।পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন মিলে ভাঙন রোধে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার পাশাপাশি কিছু সময়ের জন্য নৌযান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়াই বন্যা ও নদীভাঙনের প্রধান কারণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে নদীভাঙনের মতো দুর্যোগ আগেও ছিল। কিন্তু নদীগুলোর এমন দুরবস্থা আগে ছিল না।পলি জমতে জমতে নদীগুলো প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। নদীর গভীরতা নেই বললেই চলে। এর ফলে উজানের পানি নদী দিয়ে ঠিকমতো প্রবাহিত হতে না পেরে অধিক পরিমাণে বন্যা ও ভাঙনের সৃষ্টি করছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের গ্রহণ করা ডেল্টা প্ল্যান খুবই কার্যকর। এখন সেই পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তার আগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নদীভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষের উপযুক্ত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।