পবিত্র রমজানে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে টিসিবি সাশ্রয়ী মূল্যে প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছে। সারা দেশে টিসিবি প্রতিদিন ৫০০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাক এবং রাজধানীর ১০০টি স্পটে ১০০টি ট্রাকে বিক্রি করছে সয়াবিন তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, খেজুর ও পেঁয়াজ।
প্রতিবছরই টিসিবি ট্রাকে নির্দিষ্ট পণ্য সাশ্রয়ী দামে বিক্রি করে থাকে। অন্যান্য সময়ে টিসিবির ট্রাকের পণ্যের ব্যাপারে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের খুব একটা আগ্রহ দেখা না গেলেও এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকে এবার মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ভিড় দিন দিন বাড়ছে। এসব মুখ দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের আয় কমেছে। তাদের অনেকে দরিদ্রের কাতারে নেমে যাচ্ছে।
কিছুদিন আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ২০২০ সালের এক গবেষণা ফল বলছে, করোনার প্রকোপে দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪.৩০ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমানে মধ্যবিত্তরা দৈন্যদশা অতিক্রম করছে।
মধ্যবিত্ত থেকে মানুষ নিম্নবিত্তের কাতারে চলে যাচ্ছে। অতিমারির প্রভাব নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে ফল বলছে, করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের প্রান্তিক পরিবারগুলোর ঋণের বোঝা বাড়ছে। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় কমানো এবং সঞ্চয় ভেঙে চলার মতো পদক্ষেপের পরও ৬০.৫ শতাংশ পরিবার দেনার মধ্যে পড়েছে।
পবিত্র রমজান ও লকডাউনে ভোগ্য পণ্যের দাম যে নতুন করে ঊর্ধ্বমুখী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ সময়ে টিসিবি কিছুটা কম দামে ট্রাকে করে ভোগ্য পণ্য বিক্রি করছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এসব ট্রাকের পেছনে লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। টিসিবির পণ্য বিক্রির ট্রাকের পেছনে যে মানুষগুলো লাইনে দাঁড়াচ্ছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তাদের কয়েকজনের পরিচয়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে এক বছর আগেও এই মানুষগুলোকে টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইনে দাঁড়াতে হতো না। গত এক বছরের করোনা পরিস্থিতি তাদের এ অবস্থায় এনে ফেলেছে। একটি গবেষণা জরিপের ফল বলছে, মহামারির প্রথম দিকে প্রতি ৭০ জনে একজন চাকরি হারিয়েছেন। পরে আবার প্রতি ৯১ জনের মধ্যে একজন চাকরি পেয়েছেন।
টিসিবির ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ সারি বলে দিচ্ছে মানুষ কম দামে ভোগ্য পণ্য পেতে চায়। বাজারে ভোগ্য পণ্যের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় সারা দেশে টিসিবির ট্রাকের সংখ্যা আরো বাড়ানোর বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নিতে হবে। আমরা আশা করব মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের কথা ভেবে টিসিবির ট্রাকসংখ্যা ও ট্রাকে বিক্রীত পণ্যের সংখ্যা ও পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে।