বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো মূলত কৃষিনির্ভর। দেশের বেশির ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে কৃষির উন্নয়নে আরো বেশি জোর দিতে হবে। সে কারণে কৃষির বহুমুখীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং দেশে ও বিদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বাজার সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে আরো বেশি গবেষণা করতে হবে এবং মাটি, পানি ও আবহাওয়া অনুযায়ী কোন অঞ্চলে কী ধরনের ফল, ফসল ভালো হবে তার অঞ্চলভিত্তিক মানচিত্র বা জোন ম্যাপ প্রণয়ন করতে হবে। বৃহস্পতিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) প্রকাশিত ‘১০০ কৃষি প্রযুক্তি অ্যাটলাস’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের দেশের কৃষিপণ্য যাতে মানসম্পন্ন করা যায় তার জন্য আরো পরীক্ষাগার তৈরি করা দরকার। সেই সঙ্গে অঞ্চলভিত্তিক পরীক্ষাগারও নির্মাণ প্রয়োজন।’
বাংলাদেশের কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ভূগর্ভেও বাড়ছে লবণাক্ততা এবং তা ক্রমেই দেশের মধ্যাঞ্চলে চলে আসছে। অন্যদিকে বরেন্দ্র এলাকা ও উত্তরাঞ্চলে পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। মরুকরণ প্রক্রিয়া প্রকট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বছর দীর্ঘকালীন বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাড়ছে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ।
এত সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেও বাংলাদেশের কৃষি এগিয়ে চলেছে। অনেক কৃষিপণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে কৃষি নিয়ে সফল ও উন্নততর গবেষণার কারণে। ধান, পাট, ইক্ষু, চা, রেশম, তুলা, বনজসম্পদ এবং মৎস্যসম্পদ নিয়ে দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের যেসব উদ্ভাবন রয়েছে, তা থেকে নির্বাচিত ১০০টি উদ্ভাবন এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। লবণাক্ততাসহিষ্ণু ধান উৎপাদনে বিজ্ঞানীদের সাফল্যের জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্যোগ সহনীয় ফসল উদ্ভাবনে আরো বেশি জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, গবেষণাকে আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিই। আমাদের কৃষিপণ্য মানসম্মত করার জন্য গবেষণার সুযোগ আরো বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের সাফল্য অনেক। দেশে প্রতিবছরই আবাদযোগ্য জমি কমছে। লবণাক্ততা, খরা, বন্যাসহ প্রাকৃতিক নানা কারণে ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখন খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। ক্রমেই বেড়ে চলেছে বিভিন্ন ফসলের মোট উৎপাদন। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে নিরন্তর গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তির কারণে। যেকোনো মূল্যে এই ধারা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে।