করোনা মহামারি সারা পৃথিবীতে এখনো এক আতঙ্ক হয়ে বিরাজ করছে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি এবং মৃতের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। এটি হলো করোনার সরাসরি আক্রমণ। করোনাভাইরাসের অপ্রত্যক্ষ আক্রমণও এখন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাবিয়ে তুলেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানুষের আবেগগত, মানসিক ও আচরণগত সমস্যা। মনস্তাত্ত্বিক এসব সমস্যার উৎপত্তি প্রধানত নিজেকে আলাদা রাখা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, কোয়ারেন্টিন ও চিকিৎসাকালীন বিচ্ছিন্নতার কারণে সৃষ্ট মানসিক চাপ থেকে।
এসব সমস্যা করোনা রোগীদের মধ্যে যেমন দেখা যাচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত হয়নি এমন মানুষের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানসিক এসব সমস্যা প্রাথমিক অবস্থায় দূর করা না গেলে তা দ্বিতীয় পর্যায়ের মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্য অনেক সংস্থাই কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষের কল্যাণে যথাযথ গাইডলাইন মেনে চলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশেও করোনাজনিত মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে।
করোনা মহামারির এই সময়ে মানুষ যেমন নিজেকে নিয়ে, তেমনি পরিবারের অন্য সদস্যদের স্বাস্থ্য নিয়ে কিছুটা ভীত বা দুশ্চিন্তায় থাকে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, বিনোদনের অভাব, ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বা আনন্দ-স্ফূর্তির সুযোগ কমে যাওয়াটাও মানুষের ওপর নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করছে। করোনা পরিস্থিতিতে বহু মানুষের আয় কমে গেছে। আবার ব্যবসা-বাণিজ্যের দুঃসময় চলতে থাকা, চাকরি বা কাজকর্মের সুযোগ কমে যাওয়ায়ও বহু মানুষ আর্থিক অনটন মোকাবেলা করছে।
এসবও দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ও হতাশার সৃষ্টি করছে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তার ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য তা বড় ধরনের মানসিক আঘাতেরও কারণ হয়। তাই দেখা যায়, চিকিৎসায় করোনা থেকে মুক্ত হলেও অনেকের মধ্যে মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ প্রকট হয়ে ওঠে। এর মধ্যে থাকছে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, ঘুম না হওয়া, মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা, আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা ইত্যাদি।
অনেকের আচরণ আশপাশের মানুষের জন্যও সমস্যার কারণ হয়। সম্প্রতি রাজধানীর একাধিক হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর নেতিবাচক আচরণের শিকার হয়েছেন একাধিক চিকিৎসক ও নার্স। তাঁরা শারীরিকভাবেও নিগৃহীত হয়েছেন। এ কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাকর্মীরা খুব সতর্ক থাকছেন। কর্তৃপক্ষও দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকার গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভায়ও গুরুত্বসহকারে আলোচনা হয়েছে।
করোনায় শারীরিক চিকিৎসার মতোই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা দেওয়া। সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেলে মানসিক অসুস্থতা আরো গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। পারিবারিক ও সামাজিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। আমরা মনে করি, মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসায় যে গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে, তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন