মাঝেমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা আমাদের পুরো সমাজব্যবস্থাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। ভাবতে অবাক লাগে, দিন দিন এই সমাজ কোথায় যাচ্ছে! কোন ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা! মানুষ আলোকিত দিনের অপেক্ষায় থাকে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজও আলোকিত হবে, মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে—এটাই তো কাঙ্ক্ষিত। দেশে শিক্ষিতের হার বেড়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নও চোখে পড়ার মতো; কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মানবিক উন্নয়ন কি হয়েছে? সমাজে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা আমাদের সব অর্জন ম্লান করে দেয়।
আমরা কী দেখছি? দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। সমাজ যেন ক্রমেই বর্বরতার চরমে চলে যাচ্ছে। ব্যাপক অর্থে গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠছে না। আমাদের সমাজের পরিচয় যেন পাল্টে যাচ্ছে। পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সহনশীল সমাজ থেকে নৈতিকতা যেন নির্বাসিতপ্রায়। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে। বাড়ছে পারিবারিক কলহ। প্রকাশিত খবরটি তো সমাজকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে রাস্তায় ফেলে এক গৃহবধূর কবজি ও গোড়ালি কেটে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন তাঁর স্বামী।
শুধু নারী নির্যাতন নয়, আমাদের দেশে শিশু নির্যাতনের ঘটনা অহরহই ঘটছে। সামান্য কারণে শিশুদের আঘাত করা হচ্ছে। প্রকাশিত আরেক খবরে বলা হয়েছে, মাগুরার শালিখায় চোর সন্দেহে ১২ বছরের এক শিশুর শরীরের একাধিক স্থানে পেরেক ঢোকানো হয়েছে। আঘাত করা হয়েছে হাতুড়ি দিয়ে।
বড় হয়ে যে শিশুরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের হাল ধরবে, তাদের সঙ্গে কেন এই নিষ্ঠুর আচরণ? সমাজ দিন দিন অধঃপতনের খাদে নেমে গেছে বলেই কি শিশুর নিরাপত্তাও সুরক্ষিত নয়? প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমাজও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না।
সমাজ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে দেশে। সেসব ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্তদের আইনের হাতে সোপর্দ করার পর কয়েকটি ঘটনায় শাস্তিও হয়েছে। তার পরও থেমে নেই নির্যাতনের ঘটনা।
সমাজে নানা ধরনের দুর্বৃত্তায়ন বেড়েছে। সহিংসতা হচ্ছে কথায় কথায়। অসহিষ্ণুতা প্রকাশ পাচ্ছে সর্বত্র। মানুষের সহজাত মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সর্বত্রই অসহিষ্ণুতা দেখা দিয়েছে। এরই প্রভাব পড়ছে সমাজ মানসে। ফলে নারী ও শিশুরা আক্রান্ত হয়। এর স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। এজাতীয় সব অপরাধের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।