দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলো অনেক টাকার ঋণ মওকুফও করেছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেও ব্যর্থ হয়েছে অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক।
যেকোনো দেশেরই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য ঋণের প্রয়োজন হয়।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পাঁচ বছরের প্রজেক্টে ১৫ বছর লেগে গেলে অনেক খরচ বেড়ে যায় এবং সে ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারটি কঠিন হয়ে পড়ে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি বৈদেশিক ঋণের অপব্যবহার বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, কমিশন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠকের পর সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘অনেকে বৈদেশিক ঋণের ৫০০ টাকার জিনিস পাঁচ হাজার টাকায় কেনেন। ভাবখানা এমন এটা আর পরিশোধ করতে হবে না।
এ আর চলবে না।’
বিদেশ থেকে সাধারণত ঋণ নেওয়া হয় কোনো প্রকল্পে। যেমন—হাসপাতাল তৈরি করা, ব্রিজ তৈরি করা, টানেল বানানো ইত্যাদি। বিদেশি ঋণের জন্য নির্দিষ্ট হারে সুদ দিতে হয়, পরিশোধ করতে হয়। বাজেটের ঘাটতি পূরণেও সরকারকে ঋণ ও অনুদান নিতে হয়।
সরকারের ঋণ গ্রহণ একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু ঋণ গ্রহণের মাত্রা এবং এর ব্যবহার যদি সঠিক না হয়, তাহলে বিষয়টি আর স্বাভাবিক থাকে না।
অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে ব্যাংকিং খাতে অনেক দিন ধরেই ঋণের নামে রীতিমতো লুটপাট চলে আসছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। আগে মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতেই খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি প্রবল ছিল, এখন সে পথে পা বাড়াচ্ছে বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংক। আবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক থেকে সরকারি সংস্থাগুলোও ঋণ নেয়।
আমাদের জাতীয় বাজেটের একটি নির্ভরশীলতা থাকে বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্যের ওপর। ঋণের প্রধান প্রত্যাশা হলো, এই অর্থ যেন যথাযথ ব্যবহার করা হয়। না হলে সেটি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, সেগুলোর উপযোগিতা যাচাই করতে হবে। বিশাল অঙ্কের ঘাটতি পূরণের জন্য বেশি প্রকল্প গ্রহণ এবং প্রকল্পের সময়ক্ষেপণ করার মতো অবস্থা আমাদের নেই।
কাজেই আমাদের সরকারি ঋণব্যবস্থাকে আরো সুষ্ঠু, কার্যকর ও যৌক্তিক করতে হবে।