গ্রামের সালিসিব্যবস্থা অত্যন্ত পুরনো। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সালিসিব্যবস্থা প্রচলিত আছে। সামাজিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ যেকোনো নাগরিক ও সামাজিক প্রয়োজনে সালিস হয়ে থাকে। সালিসে যৌতুক, তালাক ও খোরপোশ সমস্যার সমাধান করা হয়।
পুরনো এই পদ্ধতিটির প্রতি মানুষের আস্থার কারণ হচ্ছে, এলাকায়ই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এর জন্য বাড়তি কোনো খরচের প্রয়োজন হয় না। এলাকার বিশিষ্টজন, বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কাউন্সিলররা এই সালিস বৈঠকে মধ্যস্থতা করেন। ফলে এলাকার মানুষও সন্তুষ্টচিত্তে সালিসের রায় মেনে নেয়। আবার এই সালিস ঘিরে এলাকায় অসন্তোষও দেখা দেয়।
বড় ধরনের গোলযোগের ঘটনাও ঘটে। গত মাসেই সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে সালিসি বৈঠকে একপক্ষের ওপর অপরপক্ষ হামলা চালায়। প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, গত শনিবার সকালে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা চক্রপাড়া গ্রামে সালিসের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যানের সামনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছেন এক যুবক।
স্থানীয় সূত্রে পাওয়া খবরে বলা হয়েছে, ওই যুবকের সঙ্গে বেশ কিছুদিন থেকে তাঁর স্ত্রীর মনোমালিন্য চলছিল। বেশ কিছুদিন ধরে বনিবনা হচ্ছিল না। এ নিয়ে একাধিকবার সালিসি বৈঠক হয়েছে দুই পরিবারের মধ্যে। কিন্তু তাতেও কোনো সমাধান না হওয়ায় গত শনিবার সকালে আবারও ওই যুবকের বাড়িতে সালিসি বৈঠকে বসেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, প্রধান শিক্ষক, গ্রামপ্রধানসহ কয়েকজন। এ সময় ওই যুবকের আচরণ নিয়ে তাঁর স্ত্রী অভিযোগ করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
এক পর্যায়ে তিনি লাঠি দিয়ে প্রধান শিক্ষক ও গ্রামপ্রধানকে পেটাতে শুরু করেন। এতে প্রধান শিক্ষকের হাত ভেঙে যায়। পরে তাঁকে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর থেকে ওই যুবক পলাতক। উল্লেখ্য, আহত প্রধান শিক্ষক অভিযুক্ত যুবকের স্ত্রীর আত্মীয়।
অভিযুক্ত যুবকের বাবা ঘটনাটি স্বীকার করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যানও বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।
ভাঙ্গুড়া থানার ওসি জানিয়েছেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযুক্ত মাহিমকে আটকের চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
দেশে প্রচালিত আইন আছে। আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার আছে সব নাগরিকের। কিন্তু আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই। সালিসি বৈঠকের আলোচনা ওই যুবকের পছন্দ না হলে তিনি প্রচলিত আইনের সাহায্য নিতে পারতেন।
কিন্তু এলাকার গণ্যমান্য মানুষের সামনে তিনি একজন প্রধান শিক্ষকের ওপর এভাবে চড়াও হতে পারেন না। উপজেলার শিক্ষক নেতারা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। এই প্রবণতা নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই যুবকের উপযুক্ত শাস্তি প্রত্যাশিত।