খেলার মাঠ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক কাজে এবং ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে নিয়মিত ব্যবহৃত হয়ে আসছে অনেক দিন আগে থেকেই। এই যে এক লোভের সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে, কোনোভাবেই এ থেকে আর পরিত্রাণ মিলছে না। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবর থেকে বরং এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে এই অসুস্থ সংস্কৃতির পরিধি বেড়েই চলেছে। মতলবের দৌড়ে আছেন অনেক প্রভাবশালী।
তাঁদের হাত যেমন লম্বা, তেমনি তাঁদের পেছনে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব ও মদদ থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়।একসময় ঢাকায় অনেক খেলার মাঠ ছিল। সেই মাঠগুলো ধীরে ধীরে উধাও হয়ে গেছে। প্রকাশিত একটি তথ্য থেকে জানা যায়, ঢাকা শহর থেকে গত ২০ বছরে ১২৬টির বেশি মাঠ হারিয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনের আওতায় যে কয়টি খেলার মাঠ আপাতত আছে, তার বেশির ভাগ বিভিন্নভাবে ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দখল হয়ে গেছে। এই মাঠগুলোর কয়েকটি আবার বাণিজ্যিক মতলবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থ উপার্জন চলছে।
একটি খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীর আয়তন ও জনসংখ্যা অনুযায়ী খেলার মাঠ খুব কম। এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে মোটা অঙ্কের টাকায় মাঠ ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের আওতাধীন মাঠ বা উন্মুক্ত স্থান দখল করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভাড়া দিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ধানমণ্ডি, কলাবাগান, শ্যামলী, উত্তরা, মিরপুর, পূর্বাচল ও বসিলা থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে খেলার মাঠ ভাড়ায় পাওয়া যায়। এলাকা, মাঠের সুবিধা ও খেলার ধরন অনুযায়ী এক দিনের জন্য ভাড়া গুনতে হয় দুই হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা।
২০১৯ সালে করা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) জরিপে বলা হয়েছে, বছরখানেক আগে ঢাকায় মাঠের সংখ্যা ছিল ২৩০। ২০০০ সালের এক জরিপে দেখা যায়, তখন ঢাকা শহরে খেলার মাঠ ছিল ১৫০টি।
সিটি করপোরেশনের মাঠ ভাড়া দেওয়ার এখতিয়ার কারো নেই। টাকার বিনিময়ে মাঠ ভাড়া দেওয়ার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশেষ করে যেসব মাঠ সরকারি জায়গায়, সেগুলো দখল করে বা লিজ নিয়ে ভাড়া দিলে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার ক্ষুণ্ন হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।