১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকা বাংলাদেশ ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংকের নিম্ন আয়ের দেশের তালিকা থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় চলে আসে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা সিপিডির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনাসভায় দ্বিতীয়বারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ বা গ্র্যাজুয়েশনের মানদণ্ড পূরণ ও উত্তরণের সুপারিশ লাভ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
সেই সভার প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে একটি বৈঠকও করেছে সিডিপি। উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে সিডিপির কাছে ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি প্রস্তুতির সময় চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই প্রস্তুতি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে সস্তা ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রপ্তানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা কমে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ আসবে বাংলাদেশের সামনে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশে যে জিএসপি সুবিধা পাওয়া যায়, ক্রমান্বয়ে সেই সুবিধা হারাতে হবে। তখন ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে।
আগামী মাসে ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনাসভায় উত্তরণের সুপারিশ পেলে পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকাল শেষে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে সস্তা ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রপ্তানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। সেই সুবিধাগুলো উত্তরণের প্রস্তুতি পর্বে চাইছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতির এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তা ছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরো তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে। বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এখন বাংলাদেশকে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে, তার একটি হচ্ছে ‘অর্থনৈতিক কূটনীতি’। খুঁজে দেখতে হবে কোন কোন দেশে বাংলাদেশের কোন কোন পণ্যের চাহিদা রয়েছে। রপ্তানি বাণিজ্যে জোর দেওয়ার পাশাপাশি দেশে অবকাঠামো উন্নয়নসহ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়াতে মনোযোগী হতে হবে।
বাংলাদেশ এরই মধ্যে সারা বিশ্বের কাছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনা, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের।
বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার জন্য অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তুতি এখন থেকে বাংলাদেশ নেবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।